ই-পেপার বৃহস্পতিবার, ০৫ জুন ২০২৫, ২২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

কেন ভারতের মুসলমানদের বারবার দেশপ্রেমের প্রমাণ দিতে হয়

আমার বার্তা অনলাইন:
০১ জুন ২০২৫, ১৯:১১

ভারতশাসিত কাশ্মীরের পহেলগামে গত ২২ এপ্রিল পর্যটকদের ওপর প্রাণঘাতী হামলার পর, ভারতের বিভিন্ন স্থানে মুসলিমবিরোধী বিদ্বেষ ও সহিংসতার ঢেউ ছড়িয়ে পড়েছে। হামলার মাত্র দুই সপ্তাহের মধ্যে সারা দেশে অন্তত ১৮৪টি মুসলিমবিরোধী ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছে দিল্লিভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা ‘অ্যাসোসিয়েশন ফর প্রোটেকশন অব সিভিল রাইটস (এপিসিআর)।

এই সহিংসতা শুধু প্রতিক্রিয়াশীল নয়, বরং এতে স্পষ্ট হচ্ছে ভারতের রাজনৈতিক ও সামাজিক বাস্তবতায় মুসলমানদের প্রতি সন্দেহ ও বিদ্বেষকে কীভাবে মূলধারায় নিয়ে আসা হয়েছে।

>> পহেলগাম হামলা ও তার পরবর্তী পরিস্থিতি

২২ এপ্রিল অজ্ঞাতপরিচয় বন্দুকধারীরা কাশ্মীরের পর্যটনকেন্দ্র পহেলগামে হামলা চালিয়ে ২৬ জনকে হত্যা করেন। এই ঘটনা কেন্দ্র করে ‘অপারেশন সিঁদুর’ নামে একটি সামরিক অভিযান বা অপারেশন পরিচালনা করে ভারত, যার মাধ্যমে পাকিস্তানের ভেতরে বিভিন্ন লক্ষ্যবস্তুতে চালানো হয়। ভারত সরকার দাবি করে, পহেলগাম হামলায় পাকিস্তান প্রত্যক্ষভাবে জড়িত, যদিও ইসলামাবাদ তা অস্বীকার করেছে।

এই অপারেশন একদিকে যেমন সীমান্তে উত্তেজনা বাড়িয়েছে, তেমনি অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতেও গভীর প্রভাব ফেলেছে, বিশেষ করে মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রতি মনোভাব ও আচরণে।

>> মুসলমানদের বিরুদ্ধে ঘৃণা ও সহিংসতার চিত্র

এপিসিআর এর তথ্য অনুযায়ী, ১৮৪টি ঘটনার প্রায় অর্ধেক ছিল বিদ্বেষমূলক বক্তব্য, বাকিগুলো ছিল হুমকি, শারীরিক নিগ্রহ, দোকান ও সম্পত্তি ধ্বংস, সামাজিক হয়রানি, গালিগালাজ ও হত্যাকাণ্ড। এসব ঘটনার মধ্যে শতাধিকই সরাসরি পাহেলগাম হামলার প্রতিক্রিয়ায় ঘটেছে।

অম্বালার মতো এলাকায় ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান দিয়ে মুসলিমদের দোকানে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এটি ছিল নারকীয় জনরোষ নয়, বরং পরিকল্পিতভাবে উগ্র হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের নেতৃত্বে সংঘটিত সহিংসতা।

>> সন্দেহের রাজনীতি ও মুসলিম নাগরিকত্বের সংকট

এই সহিংসতার মধ্যে সবচেয়ে গভীর সংকট তৈরি হয়েছে ভারতীয় মুসলমানদের নাগরিকত্বের ধারণা নিয়ে। আজকের ভারতে মুসলমানদের স্বীকৃত নাগরিক হতে হলে কেবল ভারতকে ভালোবাসা যথেষ্ট নয়- তাদের পাকিস্তানকে ঘৃণা করাও প্রমাণ করতে হয়।

বিশ্লেষক সারা আথার ‘মিডল ইস্ট আই’কে বলেন, মুসলমানদের এখন কেবল ভারতের পক্ষে অবস্থান নেওয়া নয়, বরং জোরালোভাবে পাকিস্তানের বিপক্ষে বিবৃতি দিতে বাধ্য করা হচ্ছে। এটি কোনো দেশপ্রেম নয়, এটি অপমান।

আজকাল মিডিয়ায় দেখা যায়, সাংবাদিকরা মুসলমানদের কাছে মাইক্রোফোন নিয়ে যান ও জোর করে মতামত আদায় করার চেষ্টা করেন যে, তারা পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কী বলেন। এটাই যেন এখন ভারতীয় মুসলমানদের দেশপ্রেমের মাপকাঠি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এই সামাজিক চাপ, সন্দেহ ও বৈষম্যের বাস্তব পরিণতি কতটা ভয়াবহ হতে পারে, তার প্রমাণ মিলেছে সম্প্রতি। মে মাসের শুরুতে এক মুসলিম ব্যক্তি আত্মহত্যা করেন, যিনি এক স্থানীয় সাংবাদিকের হাতে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত হন ও ‘পাকিস্তানি’ বলে অভিযুক্ত হন। ঘটনার পরে ওই সাংবাদিক ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যান।

এই মৃত্যুর পেছনে রয়েছে এমন এক সামাজিক প্রেক্ষাপট, যেখানে মুসলমানদের সন্দেহ করাই যেন স্বাভাবিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।

লেখক হুসাইন হায়দরি বলেন, ভারতে বহু বছর ধরে মুসলমানদের ‘পাকিস্তানি’ বলে উপহাস করা হয়। মুসলিম অধ্যুষিত এলাকাকে বলা হয় ‘মিনি পাকিস্তান’। ক্রিকেট ম্যাচে তারা পাকিস্তানের সমর্থক হিসেবে ঠাট্টার পাত্র হয়। তাদের বলা হয়- ‘পাকিস্তানে ফিরে যাও’। এই সংস্কৃতি দীর্ঘদিন ধরেই ভারতীয় সমাজে তৈরি হয়েছে।

এই সাংস্কৃতিক কাঠামোতেই যখন ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা বাড়ে, তখন ভারতীয় মুসলমানদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হওয়া কোনো বিস্ময়ের বিষয় নয়। বরং এটি একটি পুনরাবৃত চিত্র, যা এখন আরও তীব্রতর হচ্ছে।

আজকের ভারতীয় বাস্তবতায়, মুসলমানদেরকে গ্রহণযোগ্য হতে হলে নির্দিষ্ট কিছু দেশপ্রেমের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হয়। নাহলে, তারা ‘দেশদ্রোহী’, ‘জঙ্গি’ অথবা ‘পাকিস্তানের চর’ হিসেবে চিহ্নিত হন।

সারা আথার বলেন, এটি কোনো অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ নয়, বরং এক ধরনের জোরপূর্বক একীভবনের প্রক্রিয়া। যারা এই ‘মানদণ্ড’ পূরণ করতে পারেন না, তাদের উপর নজরদারি, সামাজিক বয়কট, হেনস্তা ও সহিংসতার আশঙ্কা থাকে।

>> রাজনৈতিক নীরবতা ও বিচারহীনতা

এই ক্রমবর্ধমান ঘৃণার বিরুদ্ধে মূলধারার রাজনৈতিক দলগুলো খুব কমই প্রকাশ্যে প্রতিবাদ করছে। এমনকি, বিরোধী দলগুলোও ভয় পাচ্ছে যে- তারা যদি এসবের বিরোধিতা করে, তাহলে জনরোষ অথবা রাষ্ট্রীয় তদন্তের মুখে পড়তে পারে।

এই নীরবতা আসলে ঘৃণার পরিবেশকে আরও স্বাভাবিক করে তোলে। ফলে আইন প্রয়োগকারীরা নীরব থাকে, আর উগ্র গোষ্ঠীগুলো প্রকাশ্যে সহিংসতা চালিয়েও পার পেয়ে যায়।

>> সামাজিক ও সংবাদ মাধ্যমগুলোর ভূমিকা

বছরের পর বছর ধরে বিভিন্ন মাধ্যমে মুসলমানদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ছড়ানো হয়েছে। পাঠ্যবই, টেলিভিশনের বিতর্ক অনুষ্ঠান, রাজনৈতিক ভাষণ, হোয়াটসঅ্যাপ বার্তা ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মুসলমানদের ‘অন্য’ বা ‘বিপজ্জনক’ হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে।

এই সাংস্কৃতিক ও তথ্যভিত্তিক প্রস্তুতির ফলেই পাহেলগাম হামলার মতো ঘটনা ঘটা মাত্রই একটি নির্দিষ্ট সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ছড়িয়ে পড়ে।

ভারতের মুসলিম জনগণের কাছে এই সহিংসতা ও সন্দেহের পরিবেশ কেবল নিরাপত্তাহীনতা নয়, বরং একটি স্থায়ী সংকটের চেহারা নিচ্ছে। রাষ্ট্র যদি তার নাগরিকদের ধর্মভিত্তিক দেশপ্রেমের পরীক্ষায় ফেলতে চায়, তবে সেটি আর গণতন্ত্র থাকে না।

এটি একটি সংখ্যাগরিষ্ঠতাবাদী, বর্ণবাদী ব্যবস্থা হয়ে দাঁড়ায়, যেখানে সংখ্যালঘুদের অস্তিত্বই প্রশ্নবিদ্ধ হয়।

কাশ্মীর হামলার পর সীমান্তে অস্ত্রের গর্জন থেমে গেলেও, ভারতের অভ্যন্তরে মুসলিম পরিচিতির বিরুদ্ধে এক অদৃশ্য যুদ্ধ চলছে। এই যুদ্ধ কোনো অস্ত্র দিয়ে নয়, বরং সন্দেহ, অপমান, বৈষম্য ও মৌনতার মাধ্যমে লড়া হচ্ছে।

প্রতিবার ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা বাড়লে ভারতীয় মুসলমানদের ‘বিশ্বস্ততার পরীক্ষা’ দিতে হয়। এখন সেই পরীক্ষা হয়ে উঠেছে আরও স্পষ্ট, প্রকাশ্য ও নির্মম।

প্রশ্নটা এখন আর মুসলমানদের দেশপ্রেম নয়। প্রশ্নটা হলো, ভারত কি তার মুসলিম নাগরিকদের নিঃশর্তভাবে গ্রহণ করতে প্রস্তুত? না কি তাদের প্রতি সন্দেহ ও শর্ত চাপিয়ে দেওয়ার সংস্কৃতি অব্যাহত রাখবে? যতদিন না সেই গ্রহণযোগ্যতা নিশ্চিত হয়, ততদিন ভারতীয় মুসলমানদের এই দামের মূল্য দিতে হবে- নিজের জীবন, নিরাপত্তা এবং মর্যাদার বিনিময়ে। -- সূত্র: মিডল ইস্ট আই

আমার বার্তা/এমই

আইপিএল উদযাপন অনুষ্ঠানে পদদলিত হয়ে নিহত ১১, আহত ৫০ জন

ভারতের দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্য কর্ণাটকের রাজধানী বেঙ্গালুরুতে আইপিএলের শিরোপা উৎসব অনুষ্ঠানে পদদলনের শিকার হয়ে মারা গেছেন

পাকিস্তানে সেনা অভিযানে ‘ভারতীয় মদতপুষ্ট’ ১৪ সন্ত্রাসী নিহত

পাকিস্তানের উত্তরপশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য খাইাবার পাখতুনখোয়ার উত্তর ওয়াজিরিস্তান জেলায় দেশটির সেনা-পুলিশ যৌথ অভিযানে ১৪ জন সন্ত্রাসী

ইসরায়েলি হামলায় একদিনে কমপক্ষে আরও ৪০ ফিলিস্তিনি নিহত

ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি হামলায় একদিনে কমপক্ষে আরও ৪০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও দুই

ভারতে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে ভারতে আরও এক ইউটিউবার গ্রেপ্তার

পাকিস্তানের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে পাঞ্জাব থেকে এক ইউটিউবারকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ভারতীয় সংস্থাগুলোর সীমান্তের ওপারে
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

সৌদিতে ভবন থেকে পড়ে বুড়িচংয়ের শ্রমিকের মর্মান্তিক মৃত্যু

মানিকগঞ্জে অবাধে লুট হচ্ছে জমির টপ সয়েল, হুমকিতে কৃষি

হামজার হেড আর সোহেলের রকেটে সহজ জয় বাংলাদেশের

নারায়ণগঞ্জবাসীকে ঈদুল আযহার শুভেচ্ছা

রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন কঠিন হবে

যানজট নিরসনে মহাসড়কে কাজ করছে ৪ হাজার পুলিশ সদস্য

বাংলাদেশের জার্সিতে হামজার প্রথম গোল

আইপিএল উদযাপন অনুষ্ঠানে পদদলিত হয়ে নিহত ১১, আহত ৫০ জন

মিনায় পৌঁছেছেন বাংলাদেশের হজযাত্রীরা

ইসির কাজ গেজেট প্রকাশ, শপথ পড়ানো নয়: ইশরাক ইস্যুতে সানাউল্লাহ

লন্ডনে ইউনূস-তারেক বৈঠক নিয়ে কোনও তথ্য নেই: পররাষ্ট্রসচিব

১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনের চূড়ান্ত ফল প্রকাশ, পাস ৭০ শতাংশ প্রার্থী

পাকিস্তানে সেনা অভিযানে ‘ভারতীয় মদতপুষ্ট’ ১৪ সন্ত্রাসী নিহত

ক্ষমতায় গেলে ১৮০ দিনের কর্মপরিকল্পনা জানালো বিএনপি

পাচারকৃত অর্থ ফেরতে প্রাধান্য দিয়ে ইউনূসের যুক্তরাজ্য সফর

জামায়াতকে দাঁড়িপাল্লা প্রতীক ফিরিয়ে দিতে একমত ইসি

সালথায় গভীর রাতে ভেঙে পড়লো সেতু, চলাচল বন্ধ

ফারুক খানের চিকিৎসা সংক্রান্ত শুনানি ২৩ জুন

ঈদে নিরাপত্তাসহ সার্বিক প্রস্তুতি ভালো রয়েছে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

অস্ত্র মামলায় কামাল মজুমদারের কথা শুনলেন না আদালত