ই-পেপার শুক্রবার, ০৯ মে ২০২৫, ২৬ বৈশাখ ১৪৩২

কাশ্মিরে হামলা : কোন পথে যাবে ভারত? হামলা করবে পাকিস্তানে?

বিবিসির বিশ্লেষণ
আমার বার্তা অনলাইন
২৪ এপ্রিল ২০২৫, ১০:১২
আপডেট  : ২৪ এপ্রিল ২০২৫, ১০:১৫

ভারতশাসিত কাশ্মিরের পেহেলগামে গত মঙ্গলবারের রক্তাক্ত হামলা – যেখানে অন্তত ২৬ জন পর্যটক নিহত হন – ২০১৯ সালের পর কাশ্মিরে সবচেয়ে ভয়াবহ হামলা হিসেবে ধরা হচ্ছে।

নিহতরা কেউ সেনা বা সরকারি কর্মচারী ছিলেন না বরং তারা ছিলেন ছুটি কাটাতে আসা “সাধারণ মানুষ”। এটিই এই হামলাকে আরও নিষ্ঠুর এবং প্রতীকী করে তোলে— এই হামলা কেবল প্রাণহানির জন্য নয়, বরং এমন এক সময়ে ঘটল যখন ভারত সরকার কাশ্মিরে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কাশ্মির সংকট মূলত দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে—যেখানে এই অঞ্চলটি পুরোপুরি দাবি করে ভারত ও পাকিস্তান, কিন্তু উভয় দেশই কেবল কিছু অংশ শাসন করে—তাতে ভারতের প্রতিক্রিয়া হবে পূর্ববর্তী অভিজ্ঞতা ও বর্তমান চাপের ভিত্তিতে।

মূলত পেহেলগামে ভয়াবহ হামলার ঠিক একদিন পর পাকিস্তানের বিরুদ্ধে একাধিক পদক্ষেপের ঘোষণা দিয়েছে ভারত । এসব পদক্ষেপের মধ্যে রয়েছে— ভারত-পাকিস্তানের প্রধান সীমান্ত ক্রসিং বন্ধ করে দেওয়া, দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান পানি বণ্টন চুক্তি স্থগিত করা, পাকিস্তানি কূটনীতিকদের বহিষ্কার এবং ভারতে থাকা পাকিস্তানি নাগরিকদের কিছু ভিসা বাতিল ও দুই দিনের মধ্যে ভারত ছাড়ার নির্দেশ।

এখানে বেশ গুরুত্বপূর্ণ যে— ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেছেন, হামলার “জোরালো জবাব” দেওয়া হবে। আর সেটা শুধু যারা হামলা চালিয়েছে তাদের নয় বরং যারা এই “নিন্দনীয় কাজের” পেছনে আছে তাদেরও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বিশ্লেষকদের মতে, প্রশ্নটা এখন এটা নয় যে— সামরিক জবাব আসবে কিনা—বরং কখন আসবে, কীভাবে দেওয়া হবে, আর তার মূল্যই বা কতটা হবে।

সামরিক ইতিহাসবিদ শ্রীনাথ রাঘবন বলছেন, “আমরা সম্ভবত এমন একটি জবাব দেখতে যাচ্ছি যা দেশীয় জনতার কাছে সংকেত দেবে, আবার পাকিস্তানকেও বার্তা দেবে। ২০১৬ সাল থেকে, বিশেষ করে ২০১৯ সালের পর, ভারতের জবাব দেওয়ার মানদণ্ড হয়ে দাঁড়িয়েছে সীমান্ত পেরিয়ে অভিযান বা বিমান হামলা।”

তার মতে, “এখন সরকারের পক্ষে সেই ধরনের প্রতিক্রিয়ার নিচে কোনও পদক্ষেপ নেওয়া কঠিন। পাকিস্তানও আগের মতোই প্রতিক্রিয়া জানাবে। সবসময়ই ভুল হিসাবের ঝুঁকি থাকে—উভয় পক্ষের জন্যই।”

তিনি এখানে ২০১৬ ও ২০১৯ সালের ভারতের বড় দুটি জবাবের কথা উল্লেখ করছেন।

২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে উরি হামলায় ১৯ জন ভারতীয় সেনা নিহত হওয়ার পর ভারত “সার্জিকাল স্ট্রাইক” চালিয়েছিল। যেখানে দাবি করা হয়েছিল, পাকিস্তানের আজাদ কাশ্মিরে “জঙ্গি ঘাঁটি” লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়েছে।

আর ২০১৯ সালে, পুলওয়ামা হামলায় কমপক্ষে ৪০ জন ভারতীয় আধাসামরিক বাহিনীর সদস্য নিহত হওয়ার পর ভারত পাকিস্তানের বালাকোটে “বিমান হামলা” চালায়—যা ছিল ১৯৭১ সালের পর পাকিস্তানের অভ্যন্তরে ভারতের প্রথম হামলা। জবাবে পাকিস্তানও পাল্টা ভারতে বিমান হামলা চালায়, যার ফলে দুই দেশের যুদ্ধবিমানের মধ্যে সংঘর্ষ হয়, ভারতীয় যুদ্ধবিমান ধ্বংস হয় এবং পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর হাতে এক ভারতীয় পাইলট ধরা পড়েন। তখন উভয়পক্ষ শক্তি প্রদর্শন করলেও পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধ এড়াতে সক্ষম হয়।

এর দুই বছর পর ২০২১ সালে ভারত ও পাকিস্তান কাশ্মির সীমান্তে তথা নিয়ন্ত্রণরেখাতে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়, যা এখনও পর্যন্ত অনেকটাই কার্যকর আছে—যদিও মাঝেমধ্যে কাশ্মিরে সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে।

পররাষ্ট্রনীতি বিশ্লেষক মাইকেল কুগেলম্যান মনে করেন, এই হামলায় হতাহতের সংখ্যা বেশি এবং সাধারণ ভারতীয় নাগরিকদের লক্ষ্যবস্তু করায় “যদি দিল্লি মনে করে বা ধরে নেয় পাকিস্তানের কোনও সম্পৃক্ততা আছে, তাহলে ভারতের সামরিকভাবে জবাব দেওয়ার সম্ভাবনা খুব বেশি।”

তিনি বলেন, “এ ধরনের প্রতিক্রিয়ার সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক লাভ হলো দেশের জনগণের জোরালো চাপ মেটানো। আর যদি এর মাধ্যমে সন্ত্রাসী লক্ষ্যবস্তু ধ্বংস করা যায়, তাহলে সেটা হুমকি কমানোর দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ। তবে এর বিপদ হলো, এটা একটি বড় সংকট বা সংঘর্ষে রূপ নিতে পারে।”

ভারতের সামনে কী কী বিকল্প আছে?

ইউনিভার্সিটি অ্যাট অ্যালবানি’র ক্রিস্টোফার ক্ল্যারি বলছে, গোপন অভিযান চালানো হলে তার দায় অস্বীকার করা যায়, কিন্তু তাতে দৃশ্যমান প্রতিশোধের রাজনৈতিক চাহিদা পূরণ নাও হতে পারে।

তিনি মনে করেন, ভারতের সামনে দুটি পথ রয়েছে। আর তা হলো— প্রথমত, ২০২১ সালের যুদ্ধবিরতি চুক্তি দুর্বল হয়ে আসছে, ফলে নরেন্দ্র মোদি আবার সীমান্তে গুলি বিনিময় শুরু করার অনুমোদন দিতে পারেন।

দ্বিতীয়ত, ২০১৯ সালের মতো বিমান হামলা বা এমনকি কনভেনশনাল ক্রুজ মিসাইল হামলা চালাতে পারে ভারত। তবে এই ধরনের প্রত্যেকটি হামলার পাল্টা হামলা বা প্রতিক্রিয়ার ঝুঁকি রয়েছে, ঠিক যেমনটা ২০১৯ সালে হয়েছিল।

তিনি সতর্ক করে বলেন, “এই মুহূর্তে যুক্তরাষ্ট্র অন্যান্য সংকটে ব্যস্ত, তাই তারা হয়তো সংকট সমাধানে সহায়তা করতে পারবে না বা চাইবে না।”

পারমাণবিক বাস্তবতা

যেহেতু ভারত ও পাকিস্তান দুই দেশই পারমাণবিক অস্ত্রধারী, তাই প্রতিটি পদক্ষেপে বাড়তি সতর্কতা প্রয়োজন। এটা শুধু সামরিক কৌশল নয়, রাজনৈতিক সিদ্ধান্তেও প্রভাব ফেলে।

সামরিক ইতিহাসবিদ শ্রীনাথ রাঘবন বলেন, “পারমাণবিক অস্ত্র যেমন একটি ভয়াবহতা, তেমনি এটি একধরনের নিয়ন্ত্রণও তৈরি করে—উভয় পক্ষই বাধ্য হয় আরও সতর্কভাবে পদক্ষেপ নিতে। প্রতিক্রিয়াটি সম্ভবত ‘নির্দিষ্ট ও লক্ষ্যভিত্তিক’ হিসেবে উপস্থাপন করা হবে। পাকিস্তান হয়তো পাল্টা প্রতিক্রিয়া জানাবে, তারপর উত্তেজনা কমানোর পথ খুঁজবে।”

তিনি আরও বলেন, “আমরা এই প্যাটার্ন অন্যান্য সংঘাতেও দেখেছি, যেমন ইসরায়েল ও ইরান—সাবধানী হামলা, তারপর উত্তেজনা কমানোর চেষ্টা। তবে সবসময়ই আশঙ্কা থাকে যে— পরিস্থিতি পরিকল্পনামাফিক না-ও এগোতে পারে।”

অন্যদিকে কুগেলম্যান বলেন, পুলওয়ামা সংকটের অন্যতম শিক্ষা হলো— “উভয় দেশই সীমিত প্রতিক্রিয়ায় স্বস্তি বোধ করে”। তার মতে, “ভারতের এখন প্রতিক্রিয়ার রাজনৈতিক ও সামরিক লাভ বিবেচনা করতে হবে, পাশাপাশি সম্ভাব্য বড় সংঘাতের ঝুঁকিও বুঝতে হবে।”

যুক্তরাষ্ট্রে দায়িত্ব পালন করা পাকিস্তানের সাবেক রাষ্ট্রদূত হুসেইন হাক্কানি মনে করেন, এবার উত্তেজনা আরও বাড়ার সম্ভাবনা আছে এবং ভারত ২০১৬ সালের মতো সীমিত “সার্জিকাল স্ট্রাইক” বিবেচনায় রাখতে পারে।

তিনি বলেন, “এই ধরনের হামলা ভারতের জন্য সীমিত এবং রাজনৈতিকভাবে কার্যকর—কারণ এতে পাকিস্তানের পাল্টা প্রতিক্রিয়া নাও আসতে পারে। তবে পাকিস্তানও পাল্টা প্রতিক্রিয়া জানাতে পারে, কারণ তারা অভিযোগ করতে পারে যে— তদন্ত বা প্রমাণ ছাড়াই তাদের দায়ী করা হচ্ছে।”

তবে ভারত যে পথই বেছে নিক এবং পাকিস্তান সেটার যে প্রতিক্রিয়াই দিক, প্রতিটি ধাপেই বিপদের আশঙ্কা রয়েছে। উত্তেজনা যে কোনও সময় বড় ধরনের সংঘর্ষে রূপ নিতে পারে, আর এর ফলে কাশ্মিরের শান্তি প্রতিষ্ঠার নাজুক যে সম্ভাবনা এখনও অবশিষ্ট রয়েছে তা আরও দূরে সরে যেতে পারে।

একইসঙ্গে ভারতকে এই হামলা ঘটার পেছনে নিজেদের নিরাপত্তা ব্যর্থতার দিকেও নজর দিতে হবে। রাঘবন বলেন, “এমন একটা হামলা পর্যটন মৌসুমের শিখরে ঘটেছে—এটা বড় ধরনের নিরাপত্তার ব্যর্থতার ইঙ্গিত দেয়, বিশেষ করে যখন কাশ্মির একটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল এবং আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সরাসরি কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ন্ত্রণে।”

রাফাল যুদ্ধবিমানের ধ্বংসাবশেষ সরিয়েছে ভারত, প্রমাণ পেয়েছে বিবিসি

ভারতের পাঞ্জাবের একটি কৃষিক্ষেতে রাফাল যুদ্ধবিমানের ধ্বংসাবশেষ পড়েছিল এবং সেনা সদস্যরা সেগুলো সরানোর কাজে যুক্ত

পাকিস্তানের পক্ষে যে বার্তা দিলেন এরদোগান

ভারত শাসিত কাশ্মীরের পেহেলগামে গত ২২ এপ্রিল হামলা ঘিরে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে সৃষ্ট উত্তেজনা যুদ্ধের রূপ

পাক-ভারত যুদ্ধ যেন পারমাণবিক যুদ্ধে পরিণত না হয়: যুক্তরাষ্ট্র

পেহেলগাম কাণ্ড নিয়ে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা চলছে। এ নিয়ে অনেক দেশ সংঘাত এড়িয়ে সমাধানের পথ

ভারতকে সিনেমা থেকে বাস্তব জগতে ফিরে আসার আহ্বান পাকিস্তানের

ভারত সরকারকে “সিনেমা” থেকে “বাস্তব” জগতে ফিরে আসার আহ্বান জানিয়েছেন পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর মিডিয়া উইং
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

রাতে নিখোঁজ, সকালে মিলল যুবকের রক্তাক্ত মরদেহ

রাফাল যুদ্ধবিমানের ধ্বংসাবশেষ সরিয়েছে ভারত, প্রমাণ পেয়েছে বিবিসি

জবি ম্যাথ ক্লাবের দায়িত্বে সিফাত ও নয়ন

নিরাপত্তা শঙ্কায় আইপিএল ছেড়ে দেশে ফিরতে চান অজি ক্রিকেটাররা

প্রাইমএশিয়ার পারভেজ হত্যা, শিক্ষার্থী ফারিয়া হক টিনা গ্রেপ্তার

দুই ইউরোপীয় প্রতিযোগিতার ফাইনালে ৩ ইংলিশ ক্লাব

পাকিস্তানের পক্ষে যে বার্তা দিলেন এরদোগান

ব্যবসায়ীর বাসায় গুলি করা সন্দেহে সেই যুবদল নেতা গ্রেপ্তার

যেসব কারণে বিয়ের প্রতি আগ্রহ কমছে পুরুষদের

পাক-ভারত যুদ্ধ যেন পারমাণবিক যুদ্ধে পরিণত না হয়: যুক্তরাষ্ট্র

বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি সামান্য বেড়ে সাড়ে ৭ শতাংশের উপরে

চামড়া শিল্প উদ্ধারে সরকারের দৃশ্যমান পদক্ষেপ দেখতে চায় দেশবাসী

হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হলো আইভীকে

পাকিস্তান থেকে সরিয়ে আমিরাতে নেওয়া হলো পিএসএল

ভারতকে সিনেমা থেকে বাস্তব জগতে ফিরে আসার আহ্বান পাকিস্তানের

আ.লীগ নিষিদ্ধে ভরসা করার বিনিময়ে পেয়েছি অশ্বডিম্ব: মাহফুজ

দুপুরের মধ্যে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করুন: শফিকুল ইসলাম

আ.লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে বাদ জুমা বড় জমায়েতের ডাক হাসনাতের

ভারত-পাকিস্তান সংঘাত আমাদের কোনও বিষয় নয়: জেডি ভ্যান্স

নতুন পোপ হলেন আমেরিকান রবার্ট প্রিভোস্ট