হার্টের রোগ, হৃদয়ের সম্পর্ক
হৃদয়ে দুই রিং, চোখে অশ্রু- শ্বশুরের পাশে মানবতার আরেক নাম আলমগীর
হার্টে রিং, পাশে ছায়ার মতো জামাই- জানুন ভালোবাসার এমন বাস্তব কাহিনি।
প্রকাশ : ২৯ জুলাই ২০২৫, ০০:২৮ | অনলাইন সংস্করণ
আমার বার্তা অনলাইন

ঢাকার মিরপুরে অবস্থিত ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটে গত ২৭ জুলাই হৃদরোগে আক্রান্ত মোঃ মোশারফ হোসেন (৫২)- এর হার্টে সফলভাবে দুটি রিং পরানো হয়েছে।
দরিদ্র কৃষিজীবী এই মানুষটি দীর্ঘদিন ধরে বুকে ব্যথা সহ্য করে আসছিলেন। শারীরিক অবস্থা খারাপের দিকে গেলে ২০ জুলাই তাকে সাতক্ষীরার শ্যামনগরের শ্রীফলকাঠি থেকে প্রথমে ভর্তি করা হয় সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। তিনদিনের মাথায়, উন্নত চিকিৎসার পরামর্শে, তাকে দ্রুত ঢাকায় স্থানান্তর করা হয়।
মোশারফ হোসেনের পাশে প্রথম থেকেই ছায়ার মতো ছিলেন তার স্ত্রী, ছোট ভাই ও মেয়ের জামাই মোঃ আলমগীর কবির, শুরু থেকেই রোগীর দেখভাল, রিপোর্ট সংগ্রহ, চিকিৎসক ও নার্সদের সঙ্গে যোগাযোগ সবকিছুই একা হাতে সামলে যাচ্ছেন। শুধু তাই নয়, ঢাকায় আসার পর থেকে আজ ২৯ জুলাই পর্যন্ত তারা দিন কাটাচ্ছেন হাসপাতালের করিডোর, বারান্দা আর রিসেপশন কক্ষের বেঞ্চে দাঁড়িয়ে বা শুয়ে। আলমগীর বলেন- "আমি একজন সাধারণ মানুষ, কিন্তু আমার শ্বশুরের জন্য আমি যা পারি করছি। ওনার সুস্থতাই আমাদের সবার শান্তি।"
ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের চিকিৎসক ডাঃ তওফিক শাহরিয়ার হক, এমবিবিএস, ডি-কার্ড, এমডি (কার্ডিওলজি) হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ, সহযোগী অধ্যাপক ও সিনিয়র কনসালটেন্ট কার্ডিওলজিস্ট এর নেতৃত্বে এনজিওগ্রামের পর হৃদযন্ত্রে দুটি ব্লক ধরা পড়ে। পরবর্তীতে দ্রুত রিং বসানোর মাধ্যমে মোশারফ হোসেনকে বাঁচানোর ব্যবস্থা করা হয়। এই চিকিৎসা অত্যন্ত ব্যয়বহুল, যা দিনমজুর মোশারফ হোসেনের পরিবারের জন্য একপ্রকার অসম্ভবই ছিল।
তার স্ত্রী বলেন, “আমরা গরিব মানুষ। আজ ০৫ দিন ধরে আমি ঢাকায়, নিজের স্বামীর মুখের দিকে তাকিয়ে দিন কাটাচ্ছি। হাসপাতালের রিসেপশনেই বসে থাকি। খাই না খাই -আল্লাহর কাছে শুধু একটাই দোয়া করি, আমার স্বামী যেন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরতে পারে।”
এই ঘটনা কেবল একজন রোগীর চিকিৎসা নয়, এটি মানবতা, আত্মত্যাগ এবং পারিবারিক মমতার এক অনন্য উদাহরণ। আলমগীরের মতো জামাইয়ের নিঃস্বার্থ সেবার গল্প বর্তমান সময়ে সত্যিই বিরল। তার মতো মানুষদের হাত ধরেই সমাজে এখনো আশার আলো টিকে আছে।
মোশারফ হোসেন এখনো হাসপাতালের পর্যবেক্ষণে রয়েছেন, তবে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তাঁর অবস্থা উন্নতির দিকে। এই মুমূর্ষু কৃষকের চিকিৎসা যেন শেষ পর্যন্ত সফল হয়, সে কামনাই দেশের সাধারণ মানুষের।