আজ থেকে চট্টগ্রাম বন্দরে নতুন মাশুল কার্যকর

প্রকাশ : ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৭:২৫ | অনলাইন সংস্করণ

  আমার বার্তা অনলাইন:

চট্টগ্রাম বন্দরের প্রস্তাবিত নতুন মাশুলের প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। গতকাল রোববার দিবাগত রাতে এই প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। 

আজ সোমবার থেকে নতুন মাশুল কার্যকরের কথা বলা হয়েছে।

সরকারি প্রজ্ঞাপনে নতুন মাশুলের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, আগের তুলনায় গড়ে ৪১ শতাংশ মাশুল বাড়ানো হয়েছে। সবচেয়ে বেশি বেড়েছে কনটেইনার পরিবহনের মাশুল। এখন থেকে কনটেইনারপ্রতি (২০ ফুট লম্বা) বাড়তি মাশুল দিতে হবে ৪ হাজার ৩৯৫ টাকা। বন্দরের সেবা নেওয়ার জন্য এই মাশুল দিতে হবে বন্দর ব্যবহারকারীদের।

গত ২৪ জুলাই বন্দরের প্রস্তাবিত মাশুল অনুমোদন করেছিল অর্থ মন্ত্রণালয়। সে সময় একসঙ্গে গড়ে ৪১ শতাংশ হারে মাশুল বাড়ানোর বিষয়ে আপত্তি জানায় বন্দর ব্যবহারকারীরা। এরপর বিষয়টি নিয়ে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে বন্দর ব্যবহারকারীদের সঙ্গে এক দফা আলোচনাও হয়েছে। কিন্তু ব্যবহারকারীদের আপত্তি আমলে না নিয়েই গতকাল প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। ফলে মাশুল বাড়ানোর যে সিদ্ধান্ত বন্দর নিয়েছিল, শেষ পর্যন্ত সেটিই বহাল থাকল।

মাশুল বাড়ানোর বিষয়ে ব্যবহারকারীদের বড় আপত্তি ছিল একলাফে গড়ে ৪১ শতাংশ মাশুল বাড়ানো হলে তাতে হঠাৎ করে ভোক্তার ওপর চাপ বেড়ে যাবে। রপ্তানি খাতের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা কমবে। আবার ভবিষ্যতে বন্দরের দুটি টার্মিনাল ছাড়া সব কটিই যাচ্ছে বিদেশিদের হাতে। ফলে মাশুল বাড়ানো হলে তার বড় সুফল পাবে বিদেশি অপারেটররা।

মাশুল বাড়ানোর এই সিদ্ধান্তের বিষয়ে জানতে চাইলে বন্দর ব্যবহারকারী এবং ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস ফোরাম চট্টগ্রামের সভাপতি ও বিজিএমইএ পরিচালক এস এম আবু তৈয়ব প্রথম আলোকে বলেন, বর্ধিত মাশুলের কারণে সবচেয়ে বেশি চাপে পড়বে তৈরি পোশাক খাত। কারণ, রপ্তানি খাতের কাঁচামাল কনটেইনারে আমদানির সময় একবার বাড়তি মাশুল দিতে হবে। আবার রপ্তানির সময় আরেক দফা মাশুল দিতে হবে। সেই হিসাবে কাঁচামাল ও প্রস্তুত পণ্যে দুই দফায় বাড়তি মাশুল দিতে হবে, যা কোনোভাবেই যুক্তিসংগত নয়।

অন্যদিকে সরকারের ভাষ্য, ১৯৮৬ সালের পর এই প্রথম বন্দরের মাশুল বাড়ানো হয়েছে। মাশুল বাড়ানোর পরও তা আশপাশের দেশগুলোর তুলনায় অনেক কম।
কোথায় কত বাড়ল

নতুন মাশুল হার তুলনা করে দেখা যায়, বর্তমানে বন্দর কর্তৃপক্ষ প্রতিটি কনটেইনার (২০ ফুট লম্বা) থেকে গড়ে মাশুল আদায় করে ১১ হাজার ৮৪৯ টাকা। নতুন মাশুল কার্যকর হওয়ায় এখন কনটেইনারপ্রতি বাড়তি দিতে হবে গড়ে ৪ হাজার ৩৯৫ টাকা। তাতে সব মিলিয়ে কনটেইনারপ্রতি গড়ে মাশুল দিতে হবে ১৬ হাজার ২৪৩ টাকা। সেই হিসাবে প্রতি কনটেইনারে মাশুল বাড়ছে গড়ে ৩৭ শতাংশ।

বন্দরের গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের নিরীক্ষিত হিসাব ধরে নতুন মাশুল কনটেইনারপ্রতি কত বাড়বে—তার হিসাব বের করেছেন এই প্রতিবেদক। প্রস্তাবিত নতুন মাশুলের ক্ষেত্রে ডলারপ্রতি বিনিময় মূল্য ধরা হয়েছে ১২২ টাকা। ডলারের বিনিময় মূল্য বাড়লে মাশুলও বাড়বে। কারণ, বন্দর কর্তৃপক্ষ ডলার হিসাবে মাশুল আদায় করে।

কনটেইনার ছাড়াও কনটেইনার জাহাজের সেবা নেওয়ার জন্য আলাদা মাশুল দিতে হয়। আবার কনটেইনারভেদে খরচ কমবেশি হবে। যেমন আমদানি কনটেইনার হলে মাশুল বাড়বে ৫ হাজার ৭২০ টাকা। রপ্তানি কনটেইনার হলে মাশুল বাড়বে ৩ হাজার ৪৫ টাকা।

কনটেইনারে মাশুল বাড়ার বড় খাত হলো জাহাজ থেকে কনটেইনার ওঠানো ও নামানো। প্রতি একক কনটেইনার ওঠানো বা নামানোর জন্য আগে মাশুল ছিল ৪৩ দশমিক ৪০ ডলার। এখন তা বাড়িয়ে ৬৮ ডলার করা হয়েছে। অর্থাৎ এই একটি মাশুল বেড়েছে ২৪ দশমিক ৬০ ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ প্রায় তিন হাজার টাকা।

কনটেইনার পণ্যে প্রতি কেজিতে আগে গড়ে মাশুল দিতে হতো ১ টাকা ২৮ পয়সা। আজ সোমবার থেকে নতুন মাশুল কার্যকর হওয়ায় এখন প্রতি কেজি কনটেইনার পণ্যে বাড়তি দিতে হবে ৪৭ পয়সা।

সমুদ্রপথে বাংলাদেশের রপ্তানির প্রায় পুরোটাই হয় কনটেইনারে। আবার কনটেইনারে করে শিল্পের কাঁচামাল ও মূল্যবান যন্ত্রপাতিও আমদানি হয়। সমুদ্রপথে আমদানি-রপ্তানি কনটেইনারের ৯৯ শতাংশই চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে পরিবহন হয়। ফলে কনটেইনারে পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে মাশুল বাড়ানোর প্রভাব বেশি পড়বে বলে জানান ব্যবহারকারীরা।

বন্দর দিয়ে কনটেইনার ছাড়াও সাধারণ পণ্য পরিবহন হয়। বন্দরের হিসাবে, প্রস্তাবিত বর্ধিত মাশুল কার্যকর হলে সব ধরনের পণ্যে কেজিপ্রতি মাশুল বাড়বে গড়ে ১৪ পয়সা। বর্তমানে কেজিপ্রতি ৩৫ পয়সা মাশুল দিতে হয়। সেই হিসাবে গড়ে মাশুল বাড়ছে ৪১ শতাংশ।

কনটেইনারের মতো সাধারণ পণ্যবাহী জাহাজগুলো বন্দর সুবিধার খুব সামান্যই ব্যবহার করে। যেমন বাল্ক জাহাজের বেশির ভাগই সাগরে নোঙর করে ছোট জাহাজে পণ্য স্থানান্তর করে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বন্দর দিয়ে মোট পণ্যের ৫৯ শতাংশই খালাস হয়েছে বহির্নোঙরে।

আমার বার্তা/এল/এমই