সাশ্রয়ী মূল্যে চট্টগ্রাম-মোংলা বন্দরের সেবা নিশ্চিত করতে হবে

প্রকাশ : ০২ আগস্ট ২০২৫, ১৫:১১ | অনলাইন সংস্করণ

  আমার বার্তা অনলাইন:

চট্টগ্রাম বন্দরে নিয়মিত কনটেইনার জট, স্টোর চার্জ ও ট্যারিফ বৃদ্ধি এবং ই-পোর্ট সিস্টেম পুরোপুরি কার্যকর না হওয়ায় আমদানি-রপ্তানি ব্যাহত হচ্ছে। আবার মোংলা বন্দরে জেটি ও শেডগুলো প্রায় সময়ই খালি থাকে। বাংলাদেশের বাণিজ্যের লাইফলাইন চট্টগ্রাম বন্দর এবং দ্বিতীয় বৃহত্তম সমুদ্র বন্দর মোংলার সক্ষমতার পুরোটা ব্যবহার করতে না পারায় এমন হচ্ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

তাদের মতে, সমুদ্র বন্দরের সীমিত ক্ষমতা এবং অন্যান্য প্রতিবন্ধকতার কারণে ভৌগোলিক অবস্থানগত সুবিধা ও শক্তিশালী উৎপাদনভিত্তিক সম্পূর্ণ কাজে লাগানো যায়নি। এই অদক্ষতা বাংলাদেশের বৈশ্বিক প্রতিযোগিতা সক্ষমতার দুর্বলতা, উচ্চ ব্যবসা ও লেনদেন ব্যয় এবং বাণিজ্য বিলম্বের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এদিকে, চট্টগ্রাম বন্দরের ব্যবস্থাপনা ও কনটেইনার টার্মিলাল কারা পরিচালনা করবে, সেই আলোচনাও রয়েছে ব্যবসায়ী ও রাজনৈতিক মহলে। তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দরের সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতি এগিয়ে নেওয়া সম্ভব। এ জন্য একটি পরিকল্পিত রোডম্যাপ থাকা প্রয়োজন।

সম্প্রতি এক আলোচনা সভায় চট্টগ্রাম বন্দর নিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরের কনটেইনার টার্মিনাল বিদেশিদের হাতে তুলে দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া কোনো অরাজনৈতিক সরকারের কাজ নয়। এই বন্দরের সক্ষমতা বাড়ানো কিংবা পরিচালনার বিষয়ে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত আসতে হবে।

আর এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, আগামী দিনে ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে বাংলাদেশের অর্থনীতির উন্নয়ন করা হবে। এ জন্য প্রয়োজনীয় সব ধরনের আইন পরিবর্তন করা হবে। সরকারের কাজ হচ্ছে ব্যবসা, বাণিজ্য ও বিনিয়োগের মাধ্যমে অর্থনীতিকে ফেসিলিটেড করা, অর্থাৎ সহযোগিতার মাধ্যমে জনগণের কাছে নিয়ে যাওয়া। কিন্তু বিগত দিনে জনগণের কাছ থেকে কেড়ে নিয়ে কিছু লুটেরাদের হাতে অর্থনীতি তুলে দেওয়া হয়েছিল। গত দেড় দশকে মুক্ত অর্থনীতির পরিবেশে কেউ কাজ করতে পারেনি। দেশের অর্থনীতি এখন গর্তের কিনারে আছে। গর্তের কিনার থেকে অর্থনীতিকে বের করে আনতে হলে ব্যবসায়ীদের সমর্থন দরকার।

মোংলা বন্দরের সক্ষমতা এবং কীভাবে এই বন্দর এগিয়ে নেওয়া হবে সে বিষয়ে পোর্ট চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল শাহীন রহমান বলেন, মোংলা বন্দরে বছরে দেড় হাজার জাহাজ নোঙর করতে পারলেও, এখন সেখানে ৮৩৫টি জাহাজ আসছে। মোংলা পোর্টের সক্ষমতা পুরোপুরি কাজে লাগানো যাচ্ছে না। অথচ এই বন্দর ব্যবহার করলে কনটেইনার জটে পড়তে হয় না। জেটি ও শেডগুলো প্রায় সময়ই খালি থাকে। তাই আমদানি-রপ্তানিকারক ব্যবসায়ীদের কাছে অনুরোধ থাকবে, আপনারা মোংলা পোর্ট ব্যবহারে উৎসাহিত হন।

তিনি বলেন, মোংলা পোর্ট উন্নয়নে এরইমধ্যে চায়নার সহযোগিতায় কিছু প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। নতুন ২টি জেটি ও ২টি ইয়ার্ডসহ অত্যাধুনিক সরঞ্জামাদি বন্দরে সংযোজন করা হয়েছে। ফলে, বন্দরের সেবার মান বাড়ছে। একই সঙ্গে সরকারের রাজস্ব আদায়ও বেড়েছে।

আসন্ন এফবিসিসিআই নির্বাচনে সহসভাপতি প্রার্থী ও ল্যাবএইড ক্যানসার হাসপাতাল অ্যান্ড সুপার স্পেশালিটি সেন্টারের ম্যানেজিং ডিরেক্টর সাকিফ শামীম বলেন, আমদানি-রপ্তানিতে ৩০ শতাংশ শুল্ক (ট্যারিফ) বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। শুল্কের হার বাড়ানোর খবর ব্যবসায়ীদের দুশ্চিন্তা বাড়ছে।

তিনি বলেন, পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে দিন শেষে বাড়তি মাশুল ভোক্তার পকেট থেকেই যাবে। তাতে পণ্যের দাম বেড়ে মূল্যস্ফীতিও বাড়ার শঙ্কা রয়েছে। অন্যদিকে, রপ্তানি পণ্যের ক্ষেত্রে পণ্য পরিবহনের খরচ বাড়বে, যা বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় রপ্তানিকারকরা পিছিয়ে যেতে পারেন। বন্দরের ব্যয় কম হলে ব্যবসায়ের ব্যয় কমে আসে, উদ্যোক্তাদের প্রতিযোগিতা সক্ষমতাও বাড়ে।

তিনি আরও বলেন, আমাদের এই দেশ বরাবরই একটি আমদানি নির্ভর দেশ। তাই খাদ্যপণ্য ও জীবন রক্ষাকারী ওষুধের মতো পণ্যসামগ্রী আমদানিতে সমানতালে বন্দর শুল্ক ধার্য করা ঠিক হয়নি। এখানে খাতওয়ারি শুল্কহার স্ল্যাব করা যেত। এক্ষেত্রে অন্য পণ্যসামগ্রীর মতো এসব পণ্যের দাম বেড়ে যাবে, যার প্রভাব পড়বে সরাসরি ভোক্তার ওপর। কারণ, ব্যবসায়ীরা উল্লিখিত শুল্ক, আমদানি করা দ্রব্যমূল্যের সঙ্গে দাম সমন্বয় করে এবং এক্ষেত্রে এসব পণ্যের মূল্য বেড়ে যাবে।

সাকিফ শামীম বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বাড়ানোর মাধ্যমে ৫-১০ শতাংশ পর্যন্ত ব্যবসার ব্যয় কমানো সম্ভব। চট্টগ্রাম বন্দরে পরীক্ষাগারের স্বল্পতা, পণ্য বা কনটেইনার রাখার স্থান স্বল্পতা, কাস্টমসের জটিলতা, উচ্চ ট্যারিফ, পণ্য খালাসে বিলম্ব প্রভৃতি কারণে ব্যবসার ব্যয় বাড়ছে।

তিনি বলেন, বন্দর ব্যবস্থাপনার সহজীকরণের মাধ্যমে ব্যয় হ্রাস করা সম্ভব। থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুরের বন্দরগুলো কিছু প্রক্রিয়া অনুসরণপূর্বক ব্যয় কমিয়ে এনেছে। তাছাড়া পণ্য পরিবহন বৃদ্ধি পেলে বন্দরের আয়ও বেড়ে যাবে। সেক্ষেত্রে চার্জ বা ফি বৃদ্ধি নয়, অধিক পণ্য পরিবহনের মাধ্যমে বাড়তি আয় করা সম্ভব। তবে সর্বাগ্রে বন্দর ব্যবস্থাপনা জটিলতা ও সময়ক্ষেপণের কারণে যে ব্যয় বাড়ে, সেটি কমিয়ে আনার উদ্যোগ নিতে হবে।


আমার বার্তা/এমই