শুল্ক হ্রাসে স্বস্তি, মার্কিন বাজারে বাড়ছে বাংলাদেশের রপ্তানি সম্ভাবনা

বিজিএমইএ সভাপতি

প্রকাশ : ০১ আগস্ট ২০২৫, ২১:২৮ | অনলাইন সংস্করণ

  আমার বার্তা অনলাইন

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক ৩৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশে নামিয়ে আনার সিদ্ধান্তে স্বস্তি প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি মাহমুদ হাসান খান।

শুক্রবার (১ আগস্ট) সন্ধ্যায় গণমাধ্যমকে দেওয়া এক লিখিত অভিমতে তিনি বলেন, গত তিন মাস ধরে পাল্টা শুল্ক ঘিরে একটি অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছিল, যার প্রভাব পড়ছিল ব্যবসা-বাণিজ্যে। এমন অনিশ্চয়তার মধ্যে কার্যক্রম চালানো কঠিন হয়ে পড়েছিল এবং মার্কিন ক্রেতারাও পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছিলেন। এ অবস্থায় পাল্টা শুল্ক ৩৫ থেকে ২০ শতাংশে নামিয়ে আনা বাংলাদেশের জন্য স্বস্তির বলে মন্তব্য করেন তিনি।

বিজিএমইএ সভাপতি জানান, প্রতিযোগী দেশগুলোর তুলনায় যদি বাংলাদেশের ওপর পাল্টা শুল্ক বেশি থাকে, তাহলে তা ব্যবসার জন্য বাধা হয়ে দাঁড়ায়। তবে পাকিস্তানের তুলনায় বাংলাদেশের পাল্টা শুল্ক মাত্র ১ শতাংশ বেশি হলেও ভারতের চেয়ে তা ৫ শতাংশ কম এবং চীনের তুলনায় ১০ শতাংশ কম, যা বাংলাদেশের জন্য একটি অনুকূল অবস্থান সৃষ্টি করেছে।

মাহমুদ হাসান খান মনে করেন, বাড়তি শুল্কের কারণে কিছুটা সময়ের জন্য ব্যবসা কমে যেতে পারে। কারণ মার্কিন ক্রেতাদেরকে আগের তুলনায় বেশি শুল্ক দিয়ে পণ্য আমদানি করতে হবে, যা তাদের মূলধনে চাপ ফেলবে। যদি তারা অতিরিক্ত অর্থায়নের ব্যবস্থা না করতে পারেন, তাহলে নতুন ক্রয়াদেশ কমে যেতে পারে। তাছাড়া এই বাড়তি শুল্ক শেষ পর্যন্ত ভোক্তাদের ওপরই গিয়ে পড়বে। পণ্যের দাম বাড়লে তা বাজারে বিক্রিতেও প্রভাব ফেলবে বলে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন।

তিনি উল্লেখ করেন, গত এপ্রিল মাসে প্রথম দফায় ট্রাম্প প্রশাসন সব দেশের পণ্যের ওপর ন্যূনতম ১০ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপ করেছিল। সেই সময় মার্কিন ক্রেতারা বিভিন্নভাবে সেটি সামাল দিয়েছেন। এমনকি কোনো কোনো ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের চাপে বাংলাদেশের সরবরাহকারীদেরও সেই বাড়তি শুল্কের একটি অংশ বহন করতে হয়েছিল।

এই প্রেক্ষাপটে তিনি বিজিএমইএ সদস্যদের উদ্দেশে বার্তা দেন, বাড়তি এই শুল্ক আমদানিকারক ও ক্রেতা প্রতিষ্ঠানকেই বহন করতে হবে এবং শেষপর্যন্ত এর প্রভাব মার্কিন ভোক্তাদের ওপর পড়বে– এই বার্তাটি পরিষ্কার রাখা জরুরি।

চীনের প্রসঙ্গ টেনে মাহমুদ হাসান খান বলেন, দেশটির ওপর এখনো ৩০ শতাংশ পাল্টা শুল্ক বহাল আছে এবং শিগগিরই চূড়ান্ত পাল্টা শুল্কহার ঘোষণা করবেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। তবে তার অভিমত, চীনের শুল্কহার বাংলাদেশের তুলনায় কম হবে না। ফলে চীন থেকে তৈরি পোশাকের ক্রয়াদেশ বাংলাদেশসহ অন্য দেশে স্থানান্তরিত হওয়ার প্রবণতা অব্যাহত থাকবে, যা বাংলাদেশের জন্য রপ্তানি বৃদ্ধির একটি বড় সুযোগ হয়ে দাঁড়াতে পারে।

তবে তিনি সতর্ক করেন, এই সুযোগ কাজে লাগাতে হলে দেশের জ্বালানি সরবরাহ ব্যবস্থাকে চাহিদা অনুযায়ী প্রস্তুত রাখতে হবে, চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বাড়াতে হবে এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে হবে। এসব বিষয় অনুকূলে থাকলে বাংলাদেশ এই রপ্তানি সম্ভাবনাকে বাস্তবতায় রূপ দিতে পারবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

চুক্তি প্রসঙ্গে বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, এখন পর্যন্ত তারা কেবল চুক্তির খসড়া বা সারসংক্ষেপ সম্পর্কে অবহিত হয়েছেন, পুরো চুক্তির বিস্তারিত এখনো হাতে পাননি। তবে তিনি আশা প্রকাশ করেন, দেশের স্বার্থ এবং বাণিজ্যিক বাস্তবতা বিবেচনায় নিয়েই বাণিজ্য প্রতিনিধি দল এই চুক্তি সম্পাদন করেছে।

তিনি মনে করিয়ে দেন, এই আলোচনার অংশ হিসেবে বাংলাদেশ কিছু প্রতিশ্রুতি ও চুক্তি করেছে, যেগুলো যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এর মধ্যে গম, তুলা, এলএনজি কেনার মতো স্বল্পমেয়াদি এবং উড়োজাহাজ কেনার মতো দীর্ঘমেয়াদি বিষয় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এসব প্রতিশ্রুতিতে গাফিলতি হলে ভবিষ্যতে বাংলাদেশ আবারও জটিলতায় পড়তে পারে বলে সতর্ক করেন মাহমুদ হাসান খান।


আমার বার্তা/জেএইচ