ঈদের পর গরু-খাসির বাজারে মন্দাভাব, স্বস্তি মাছ-মুরগিতে
প্রকাশ : ২৭ জুন ২০২৫, ১৫:২০ | অনলাইন সংস্করণ
আমার বার্তা অনলাইন

ঈদুল আযহার প্রায় তিন সপ্তাহ পার হলেও রাজধানীর বাজারে এখনও কোরবানির মাংসের রেশ রয়ে গেছে। ফলে গরু-খাসির মাংসের দোকানগুলোতে নেই তেমন ক্রেতার ভিড়। দামও এখনো ঈদের আগের জায়গায় রয়ে গেছে। অন্যদিকে সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় ব্রয়লার মুরগি ও ডিমের দাম আরও কমেছে। মাছের বাজারেও রয়েছে স্বস্তির চিত্র। সবমিলিয়ে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির ক্রেতারা মাংসের পরিবর্তে মাছ-মুরগি ও ডিমের দিকেই ঝুঁকছেন বেশি।
শুক্রবার (২৭ জুন) সকালে রাজধানীর রামপুরা, বনশ্রীসহ আশেপাশের বাজার ঘুরে এবং সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
বাজারে ব্রয়লার মুরগি আগের তুলনায় কিছুটা কম দামে বিক্রি হচ্ছে। বর্তমানে প্রতি কেজি ব্রয়লার বিক্রি হচ্ছে ১৪০ থেকে ১৫০ টাকায়, যা ঈদের আগেও ছিল ১৬০ থেকে ১৭০ টাকা। সোনালি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২২৫ থেকে ২৩৫ টাকা কেজিতে। লাল লেয়ার ও সাদা লেয়ার বিক্রি হচ্ছে যথাক্রমে ২৪০ এবং ২৩০ টাকা দরে। দেশি মুরগির দাম এখনও তুলনামূলক বেশি, কেজিপ্রতি ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকা। হাঁস বিক্রি হচ্ছে জাতভেদে ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা প্রতি পিস দরে।
এছাড়াও আজকের বাজারে গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ থেকে ৭৮০ টাকা কেজি দরে, খাসি ১১০০ টাকা ও ছাগলের মাংস ১০০০ টাকা কেজি। তবে বিক্রেতারা বলছেন, এই দামে কেউ আসছে না। ঈদের পর যাদের ঘরে কোরবানির মাংস আছে, তারা নতুন করে বাজার করছেন না।
ডিমের দামেও ঈদের পর থেকে ক্রমাগত কমতির ধারা চলছে। পাইকারি বাজারে প্রতি ডজন ডিম বিক্রি হচ্ছে ১১৮ থেকে ১২০ টাকায় আর খুচরা পর্যায়ে এসব ডিম বিক্রি হচ্ছে ১২৫-১৩০ টাকায়, যেখানে কয়েক সপ্তাহ আগেও এটি ছিল ১৩৫–১৪০ টাকা। তবে পাড়া-মহল্লার খুচরা দোকানগুলোতে এখনো ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
ঈদের সময় মাছের বাজারে যে খরা ছিল, এখন তা অনেকটাই কেটে গেছে। রাজধানীর বাজারগুলোতে এখন রুই, কাতল, পাবদা, চিংড়ি, টেংরা, শিংসহ সবধরনের মাছ পাওয়া যাচ্ছে পর্যাপ্ত পরিমাণে। সরবরাহ বেশি থাকায় দামেও নেই বড় কোনো ঊর্ধ্বগতি।
বড় আকারের রুই ও কাতল মাছ বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৩৪০ টাকা কেজি দরে। পাবদা বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা, চিংড়ি ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকা, টেংরা ৬০০–৭০০ টাকা, শিং ৪০০–৪৫০ টাকা এবং কৈ ২০০–২২০ টাকায়। এছাড়া সাধারণ তেলাপিয়া ও পাঙ্গাস পাওয়া যাচ্ছে ১৮০ থেকে ২০০ টাকা কেজিতে। দেশি জাতের শিং ও কৈ মাছ এখনও দুষ্প্রাপ্য, যার দর যথাক্রমে ১২০০ ও ১০০০ টাকা কেজি।
রামপুরা বাজারে দেখা যায়, বেশিরভাগ ক্রেতাই ভিড় করছেন মুরগির দোকানে। গৃহিণী নাহিদা সুলতানা বলেন, “ঈদের পর এখন এমনিতেই গরুর মাংস খেতে ইচ্ছা করছে না, আবার দামও অনেক বেশি। আজ দেখলাম ব্রয়লারের দাম একটু কমেছে। দুই কেজি নিয়ে যাচ্ছি, রান্নাও সহজ, খরচও ম্যানেজেবল।”
তিনি আরও বলেন, “দেখলাম মাছও তুলনামূলক সস্তা, তাজাও। পাবদা আর তেলাপিয়া নিলাম। বাচ্চারাও মাছ পছন্দ করে, রান্নাতেও সময় কম লাগে।”
ডিমের দাম প্রসঙ্গে ব্যাংক কর্মকর্তা মাহফুজ আলম বলেন, “বাসায় ডিম এখন প্রায় প্রতিদিনই লাগে। আগের চেয়ে ১৫–২০ টাকা কমে পাচ্ছি বলে কিছুটা সাশ্রয় হচ্ছে। তবে খুচরায় এখনো বেশি রাখছে, সেটাও ঠিক নয়।”
বাজারে ব্রয়লার ও লেয়ার মুরগি বিক্রেতা মো. সালেহ উদ্দিন বলেন, “ঈদের পর থেকে প্রতিদিনই মুরগির বিক্রি বাড়ছে। মানুষ এখন হালকা খাবার খাচ্ছে, কোরবানির মাংস খেয়ে সবাই ক্লান্ত। ব্রয়লারের কেজি ৫–১০ টাকা কমেছে। বিক্রি বেড়েছে ঠিকই, কিন্তু লাভ খুব একটা নেই, দাম কম থাকায় মার্জিনও কম।”
তিনি আরও বলেন, “ বাজারে সোনালি মুরগির চাহিদাও বাড়ছে। তবে দেশি মুরগি অনেক দাম, তাই হাত কম যাচ্ছে ওদিকে।”
মগবাজারে মাছ বিক্রেতা মো. কাওছার মিয়া বলেন, “ঈদের সময় মাছ কেউ কিনত না, দোকান একেবারে ফাঁকা ছিল। এখন আবার বাজারে লোকজন আসছে, মাছও ভালো যাচ্ছে। রুই, কাতল, পাবদা এসব সবচেয়ে বেশি বিক্রি হচ্ছে।”
তিনি আরও বলেন, “দাম খুব একটা বাড়েনি। মাছ যেমন আসছে প্রচুর, তেমনি মানুষও মাছ খেতে আগ্রহী হচ্ছে। যারা কোরবানি দেননি বা কম দিয়েছে, তারা আবার মাছ-মুরগিতেই ফিরে গেছে। এখন দিনে ১৫–২০ কেজি রুই-কাতল বিক্রি হচ্ছে, আগের তুলনায় দ্বিগুণ বলা যায়।”
আমার বার্তা/জেএইচ