দেশের অন্যতম সম্ভাবনাময় শিল্প—পোল্ট্রি খাতের বিকাশ ও টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে ২০২৫-২৬ অর্থ বছরের জাতীয় বাজেটে বিশেষ বরাদ্দ চেয়েছে বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশন (বিপিআইএ)। ডিমের বাজারে স্থিতিশীলতা ও আধুনিক সংরক্ষণব্যবস্থাসহ ছয়টি প্রস্তাব উপস্থাপন করেছে সংগঠনটি।
মঙ্গলবার (১৭ জুন) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ দাবি জানায় বিপিআইএ।
এতে বলা হয়, দেশের পোল্ট্রি শিল্প বর্তমানে প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকার একটি বৃহৎ অর্থনৈতিক খাতে পরিণত হয়েছে। এ খাতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত প্রায় ৬০ লাখ মানুষ। গ্রামীণ অর্থনীতিতে অর্থপ্রবাহ বৃদ্ধির পাশাপাশি জাতীয় জিডিপিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে এ শিল্প। চার দশকের পরিশ্রম, বিনিয়োগ ও প্রযুক্তির মেলবন্ধনে গড়ে ওঠা অবকাঠামো আজ বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকট ও বাজারের অস্থিরতার কারণে মারাত্মক চ্যালেঞ্জের মুখে। খাদ্য, বাচ্চা, ভ্যাকসিন ও ওষুধের মূল্য ডলারের মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। ফলে খামারিদের উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। এতে বিশেষ করে ছোট ও মাঝারি উদ্যোক্তারা লোকসানে পড়ে খামার বন্ধ করতে বাধ্য হচ্ছেন, যা ভবিষ্যতে ডিম ও মুরগির সরবরাহে ঘাটতির আশঙ্কা তৈরি করছে।
জাতীয় বাজেটে বিপিআইএ’র ছয় দফা প্রস্তাব:
১. প্রযুক্তি ক্রয়ে সহায়তা ও সহজ শর্তে ঋণ:
ছোট ও মাঝারি খামারিদের আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারে উৎসাহিত করতে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরে নিবন্ধিত লেয়ার ও ব্রয়লার খামারিদের জন্য নামমাত্র সুদে মাঝারি ও দীর্ঘমেয়াদি ঋণ প্রদানে বিশেষায়িত ব্যাংকের মাধ্যমে বাজেটে বিশেষ বরাদ্দ রাখার আহ্বান জানানো হয়েছে।
২. ডিমের বাজারে স্থিতিশীলতা ও আধুনিক স্টোরেজ:
রমজান ও ঈদকেন্দ্রিক সময়ে ডিমের চাহিদা হ্রাস পায়, ফলে খামারিরা লোকসানের সম্মুখীন হন। এ সংকট মোকাবিলায় ডিম উৎপাদন প্রবণ জেলাগুলোতে আধুনিক ও উন্নত সংরক্ষণব্যবস্থা গড়ে তুলতে পাইলট প্রকল্প হাতে নেওয়ার জন্য বাজেটে থোক বরাদ্দের দাবি জানিয়েছে বিপিআইএ।
৩. বিদ্যুৎ বিলে ছাড় প্রক্রিয়া সহজীকরণ:
বর্তমানে ছোট খামারিরা প্রশাসনিক জটিলতার কারণে ২০ শতাংশ বিদ্যুৎ বিল রিবেট সুবিধা পাচ্ছেন না। ট্রেড লাইসেন্স, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের নিবন্ধন ও বিপিআইএ’র পরিদর্শন রিপোর্টের ভিত্তিতে এই সুবিধা নিশ্চিত করতে এবং প্রক্রিয়াটি প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মাধ্যমে সম্পন্ন করার সুপারিশ করা হয়েছে।
৪. পোল্ট্রি পণ্য বিজনেস সেন্টার স্থাপন:
ফড়িয়া ও মৌসুমি মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য কমিয়ে খামারিদের সরাসরি বিক্রয়ের সুযোগ তৈরি করতে প্রতিটি জেলায় অবকাঠামোগত সুবিধাসহ ‘পোল্ট্রি পণ্য বিজনেস সেন্টার’ প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব করেছে সংগঠনটি।
৫. প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত খামারিদের পুনরুদ্ধার:
অতি বৃষ্টি, বন্যা ও ঢলে ক্ষতিগ্রস্ত খামারিদের আর্থিক সুরক্ষা ও পুনরুদ্ধারে বাজেটে থোক বরাদ্দ রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত খামারিরা দ্রুত উৎপাদনে ফিরতে পারবেন এবং দেশের প্রোটিন সরবরাহ ব্যাহত হবে না।
৬. উচ্চ শুল্ক হার হ্রাস:
এসআরও নম্বর ২০৩ (২৯ মে ২০২৫) অনুযায়ী কিছু ক্ষেত্রে পোল্ট্রি ফিড ও যন্ত্রাংশ আমদানিতে কর রেয়াত দেওয়া হলেও কিছু এইচএস (HS) কোডে এখনও উচ্চ শুল্ক বহাল রয়েছে। এসব কোড পুনর্মূল্যায়ন করে শুল্ক প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছে বিপিআইএ।
বিবৃতিতে বিপিআইএ সভাপতি বলেন, পোল্ট্রি শিল্প কোনো সরল সমীকরণ নয়। প্রাকৃতিক ও অর্থনৈতিক নানা চ্যালেঞ্জের মধ্যেও খামারিরা মানুষের জন্য সাশ্রয়ী মূল্যে প্রোটিন সরবরাহ নিশ্চিত করে চলেছেন। তাই জাতীয় উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষায় বাজেটে পোল্ট্রি শিল্পকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া অত্যন্ত জরুরি।
আমার বার্তা/এল/এমই