এনবিআর বিলুপ্তি: আজ চতুর্থ দিনের মতো চলবে কলম বিরতি

প্রকাশ : ১৮ মে ২০২৫, ১১:৪৩ | অনলাইন সংস্করণ

  আমার বার্তা অনলাইন

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বিলুপ্ত করে জারি করা ‘রাজস্ব অধ্যাদেশ ২০২৫’ বাতিলের দাবিতে আজ রবিবার চতুর্থ দিনের মতো কলম বিরতি পালন করছেন রাজস্ব প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। রাজধানীসহ সারাদেশের আয়কর, কাস্টমস ও ভ্যাট দপ্তরে সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত চলছে এই কর্মসূচি।

গত ১২ মে গভীর রাতে সরকার এনবিআর বিলুপ্ত করে ‘রাজস্ব নীতি বিভাগ’ ও ‘রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগ’ নামে দুটি পৃথক সংস্থা গঠনের অধ্যাদেশ জারি করে। অথচ এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে সরকারের গঠিত পরামর্শক কমিটির সুপারিশ এবং শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রস্তাব উপেক্ষা করা হয়েছে—এমন অভিযোগ তুলেছেন রাজস্ব কর্মকর্তারা। এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের ব্যানারে তারা আন্দোলনে নামেন।

নতুন অধ্যাদেশকে অবিবেচনাপ্রসূত ও পেশাগত স্বার্থবিরোধী আখ্যা দিয়ে আন্দোলনকারীরা বলছেন, এটি বাস্তবতা বিবর্জিত এবং এতে রাজস্ব কাঠামোর দীর্ঘদিনের ঐক্য ও দক্ষতা নষ্ট হবে। তাদের মতে, নির্বাহী বিভাগের করায়ত্ত হয়ে পড়বে রাজস্ব প্রশাসন, যা সুশাসনের জন্য বিপজ্জনক। দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) একই যুক্তিতে অধ্যাদেশটি সংশোধনের আহ্বান জানিয়েছে।

অধ্যাদেশ নিয়ে সরকার অভ্যন্তরেই মতবিরোধ স্পষ্ট। পরামর্শক কমিটির সদস্য ও এনবিআরের সাবেক সদস্য ফরিদ উদ্দিন এবং আমিনুর রহমান গণমাধ্যমে বলেছেন, তাদের সুপারিশ উপেক্ষা করে অধ্যাদেশটি জারি করা হয়েছে। তারা জানান, সংস্কার কমিটির চূড়ান্ত প্রতিবেদন এখনো গোপন রাখা হয়েছে, যা অগ্রহণযোগ্য।

এনবিআর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দাবি, শুরু থেকেই আন্দোলন দমাতে নানা চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে। চেয়ারম্যান ঘনিষ্ঠ কয়েকজন কর্মকর্তা আন্দোলন দমন ও প্রশ্নবিদ্ধ করার অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এনবিআরের বাইরে থেকেও এই আন্দোলন ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা হচ্ছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। সম্প্রতি এক আইনজীবীর করা একটি রিট নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তাদের দাবি, এই রিটের পেছনে কারা রয়েছে, সেটি নিয়ে তারা নিশ্চিত নন। অনেকেই মনে করছেন, তৃতীয় পক্ষ এখানে সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করছে।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জুয়েল আজাদ এই রিট দায়ের করেন। তার ভাষ্যে, অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা ছাড়াই অধ্যাদেশ জারি করা হয়েছে, যা ১৯৭২ সালের রাষ্ট্রপতির আদেশকে বিলুপ্ত করেছে। নতুন কাঠামোতে এনবিআরের কর্মকর্তারা শীর্ষ পদ থেকে বঞ্চিত হবেন, যা সংবিধানের ২৯(১) অনুচ্ছেদ লঙ্ঘন করে।

আন্দোলনের মধ্যে বিসিএস আয়কর (ট্যাক্সেশন) অ্যাসোসিয়েশন এবং বিসিএস কাস্টমস অ্যান্ড ভ্যাট অ্যাসোসিয়েশনকে অকার্যকর ঘোষণা করেছেন এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের সদস্যরা। তাদের মতে, সংগঠন দুটি সদস্যদের স্বার্থ রক্ষায় সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। আন্দোলনের নেতৃত্ব এখন ঐক্য পরিষদই দিচ্ছে।

শনিবার বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে উপকর কমিশনার নিপুন চাকমা বলেন, সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে এই অচলাবস্থা নিরসনের চেষ্টা চলছে। তিনি জানান, আন্তর্জাতিক যাত্রীসেবা, রপ্তানি কার্যক্রম এবং জাতীয় বাজেট প্রস্তুতির কাজ আন্দোলনের আওতামুক্ত রাখা হয়েছে। পাশাপাশি করদাতা ও সেবাপ্রার্থীদের সাময়িক অসুবিধার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন তিনি।

শনিবার রাজধানী ও আশপাশের দেড় সহস্রাধিক কর্মকর্তা রাজস্ব ভবনে সমবেত হন। কর্মসূচিতে দফায় দফায় কর্মীসভা, প্ল্যাকার্ডসহ মৌন প্রতিবাদ ও ‘আমরা এনবিআর চাই’ শ্লোগানে মুখর ছিল রাজস্ব ভবন এলাকা। রোববারের প্রেস ব্রিফিংয়ে পরবর্তী কর্মসূচির ঘোষণা আসবে বলে জানিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। তাদের বক্তব্য, এই আন্দোলন সফল হলে অনিষ্পন্ন সব কাজ দ্রুত নিষ্পন্ন করতে তাঁরা অতিরিক্ত সময় দেবেন।


আমার বার্তা/জেএইচ