শুরু হয়েছে ৪ দিনব্যাপী ন্যাপ এক্সপো-২০২৪

প্রকাশ : ২২ এপ্রিল ২০২৪, ১৮:৫৩ | অনলাইন সংস্করণ

  অনলাইন ডেস্ক:

শুরু হয়েছে জাতিসংঘ জলবায়ু অভিযোজন সম্মেলন ন্যাশনাল এডাপটেশন প্লান (ন্যাপ) এক্সপো-২০২৪ বাংলাদেশ। ইউএনএফসিসিসির তত্ত্বাবধানে স্বল্পোন্নত দেশগুলোর বিশেষজ্ঞ গ্রুপ এবং বিভিন্ন সংস্থার সহযোগিতায় এই এক্সপোর আয়োজন করা হয়েছে।

সোমবার (২২ এপ্রিল) সকালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ন্যাপ এক্সপোর উদ্বোধন ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২২ এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া এই এক্সপোটি চলবে আগামী ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত।

ন্যাপ এক্সপো একটি আন্তর্জাতিক ফোরাম। যেখানে সংশ্লিষ্ট স্টেক হোল্ডাররা ন্যাপ প্রণয়ন এবং বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে পারস্পরিক যোগাযোগ ও অভিজ্ঞতা পরস্পরের সাথে বিনিময় করেন।

আয়োজক সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশের জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত সফলভাবে মোকাবিলা করার বিষয়গুলো বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরতে এবং এই বিষয়ে অন্যান্য দেশের কার্যক্রম সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয় নিজেদের সাথে বিনিময় করার লক্ষ্যেই আয়োজন করা হয়েছে ন্যাপ এক্সপো ২০২৪ বাংলাদেশ।

ন্যাপ এক্সপো ২০২৪ এ অংশগ্রহণ করতে ১০৪টি দেশের ৩৮৩ জন ইউএনএফসিসিসিতে রেজিস্ট্রেশন করেছে। যার মধ্যে ১১৪ জন বাংলাদেশি। এছাড়া, দেশের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিবৃন্দ, জলবায়ু বিশেষজ্ঞবৃন্দ, এনজিওর প্রতিনিধিবৃন্দ, স্বেচ্ছাসেবক শিক্ষার্থীসহ ৫৫০জন এই এক্সপোতে অংশগ্রহণ করেছেন।

উদ্বোধনের পর এক্সপোতে অংশ নেওয়া বিভিন্ন স্টল পরিদর্শন করেন প্রধানমন্ত্রী। পরিদর্শন শেষে প্রধানমন্ত্রী এক্সপো থেকে বিদায় নিলে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের সেলিব্রিটি রুমে শুরু হয় উচ্চ-স্তরের ট্রান্সফরমেশনাল ডায়ালগ সেশন।

এতে মডারেটরের দায়িত্ব পালন করছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী।

উচ্চ-স্তরের ট্রান্সফরমেশনাল ডায়ালগ সেশনে কিনোট স্পিকার হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইউএনএফসিসিসির এক্সিকিউটিভ সেক্রেটারি মি. সাইমন স্টিয়েল। সেশনে কন্ট্রিবিউটর হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতিসংঘের রেসিডেন্ট কো-অর্ডিনেটর মিসেস গুইন লুইস।

এক্সপোর প্রথম দিনে চলমান উচ্চ-স্তরের ট্রান্সফরমেশনাল ডায়ালগ সেশনে মধ্যাহ্ন ভোজের বিরতিতে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরীর বার্তা২৪.কমরক বলেন, বাংলাদেশের জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবেলায় আমরা যে পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি তার জন্য ব্যাপক অর্থায়নের প্রয়োজন। পরিকল্পনা অনুযায়ী যে পরিমাণ অর্থায়নের প্রয়োজন হবে তা বাংলাদেশ সরকারকে এককভাবে যোগান দেয়া সম্ভব না। ২৫টি লাইন মিনিস্ট্রির মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য এই অর্থবছরে ৩৭ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করছি।

তিনি বলেন, বর্তমানে আমাদের যে চাহিদা আছে তাতে প্রতিবছর আমাদের আট বিলিয়ন ডলারের প্রয়োজন। এই বিপুল অর্থ কিভাবে যোগান দিবো, সে ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যে সকল প্রতিষ্ঠান ও সংস্থা এবং আমাদের উন্নয়ন সহযোগী যারা আছেন তাদের এগিয়ে আসতে হবে। সুতরাং জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবেলায় আমরা এই ন্যাপের মাধ্যমে বাংলাদেশ সহ অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশ, স্বল্পোন্নত দেশ, অনুন্নত দেশ এবং ছোট দ্বীপ রাষ্ট্রের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরছি।

মন্ত্রী আরও বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবেলায় এখনও পর্যন্ত বাংলাদেশ সফলভাবে যে কাজগুলো করেছে অনেক দেশ এখনও সে জায়গায় পৌঁছাতে পারেনি। বিভিন্ন দেশ থেকে আসা প্রতিনিধিরা তাই জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে বাংলাদেশের কার্যক্রম সম্পর্কে জানতে পেরে এবং এক্সপোতে নিজেদের কার্যক্রম তুলে ধরতে পেরে উচ্ছ্বসিত এবং আনন্দিত। সেই সাথে পরস্পরের কার্যক্রম বিনিময়ের মাধ্যমে আমরা উভই উপকৃত হচ্ছি।

এছাড়া ন্যাপ এক্সপোতে বাংলাদেশ বিভিন্ন সেশন আয়োজন করবে। এরমধ্যে ‘মোবিলাইজিং ডোমেস্টিক ক্লাইমেট ফাইন্যান্সঃ এক্সপেরিএন্স অব বাংলাদেশ’ সেশনে নিজস্ব জলবায়ু ফান্ড বা ট্রাস্ট ফান্ড নিয়ে আলোচনা করা হবে। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থা থেকে জলবায়ু সহিষ্ণু অবস্থার দিকে উত্তরণের জন্য ২০০৯ সালে নিজস্ব অর্থায়নে 'বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ড' প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে, যা বিশ্বে বিরল একটি উদ্যোগ। আমাদের নিজস্ব সম্পদ থেকে এই তহবিলে এই পর্যন্ত ৪৯০ মিলিয়ন ডলার ব্যয়ে বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে।

‘এডভান্সমেন্ট অব ন্যাশনাল ক্লাইমেট প্ল্যানস অব বাংলাদেশ’ শীর্ষক আরেকটি সেশনে বাংলাদেশের জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনা বিষয়ে সামগ্রিক আলোচনা করা হবে।

অপরদিকে এক্সপো ঘুরে দেখা যায়, সম্মেলনে মোট ২৩টি স্টলে বিভিন্ন দেশের অভিযোজনমূলক কর্মকাণ্ড প্রদর্শিত হচ্ছে। এছাড়াও, ৪ দিনে ৩৪টি সেশনে
বিশেষজ্ঞগণ ট্রান্সফরমেশনাল এডাপটেশন, ফিনান্সিয়াল মেকানিজম, এডাপ্টেশন একটিভিটি মনিটরিং এন্ড ইভালুয়েশন টুলস, জেন্ডার রেস্পনসিভভ এডাপটেশন প্রভৃতি বিষয়ে আলোচনা করবেন।

আর বাংলাদেশের জন্য বরাদ্দকৃত ১৩টি স্টলে জলবায়ু অভিযোজনের বিষয়সমূহ প্রদর্শন করা হবে বলেও জানানো হয়েছে।


আমার বার্তা/এমই