অপহরণের পর প্রযোজকে হত্যার হুমকি নিরাপত্তা চেয়ে সুবর্ণা হত্যাকারীদের বিচারের দাবিতে মানববন্ধন

প্রকাশ : ০৩ জুলাই ২০২৫, ১৭:২৯ | অনলাইন সংস্করণ

  বিনোদন প্রতিবেদক

পূর্ব শত্রুতার জের ধরে সম্প্রতি প্রয়াত জনপ্রিয় চিত্রনায়ক সালমান শাহর ভক্ত ও চলচ্চিত্র প্রযোজক মো. রাশেদুল ইসলাম রাশেদ অপহরণ ও মারধরের শিকার হয়েছেন। এ ঘটনায় এরই মধ্যে ৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছে রূপগঞ্জ থানা পুলিশ। এই ঘটনায় বৃহস্পতিবার (০৩ জুলাই) ইউসুফগঞ্জ স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনে চলচ্চিত্র প্রযোজক রাশেদের ভাতিজি সুবর্ণা আক্তারের ধর্ষণকারী এবং হত্যাকারীদের ফাঁসির দাবিতে মানববন্ধন করেন এই স্কুলের শিক্ষার্থীরা। এসময় ভাতিজি হত্যা এবং অপহরণ করে মারধরের বিচার চেয়েছেন এই প্রযোজক। পাশপাশি পরিবারের নিরাপত্তা চেয়েছেন। মানববন্ধনে শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘মাত্র ১১ বছর বয়সে সুর্বণা ধর্ষণের শিকার হয়েছে। এরপর ওকে হত্যা করা হয়। এই ঘটনা কেন্দ্র করে সুবর্ণার চাচাকে অপরহণ করে মারধর করা হয়েছে। এতে করে আমাদের জীবন হুমকির মুখে। প্রতিনিয়ত দেশে ধর্ষণের শিকার হচ্ছে আমাদের মতো কোমলমতি শিশুরা। আমাদের সহপাঠীও পশুদের হাত থেকে রেহাই পায়নি। যে কারণে আমরা আতঙ্গে আছি। স্কুলে আসতে ভয় পাই। আমরা দ্রুত সুবর্ণা হত্যাকারীদের ফাঁসি চাই।’ মানববন্ধনে কান্না জড়িত কণ্ঠে প্রযোজক রাশেদ বলেন, ‘আমার অপরাধ না থাকলেও অপহরণ করে মারধর করে। কয়েক বছর ধরে আমরা তাদের হয়রানির শিকার। বিভিন্ন সময় হুমকি দিলেও মামলা চালিয়ে যাই। গত শুক্রবার আমাকে অপরহণ করে চাঁদা চেয়েছে ৭০ লাখ টাকা এবং মামলা তুলে নেওয়ার জন্য চাপ দেয়। আমি অপরাধীদের শাস্তি চাই। গণধর্ষণের বিচার চাওয়া কি আমাদের অপরাধ? এই ঘটনায় ৬ জন গ্রেপ্তার হলেও তাদের লোকজন প্রতিনিয়ত আমাকে মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছে। অপরাধীর দৃষ্টান্ত শাস্তি চাই এবং আমার ও পরিবারের নিরাপত্তা চাই।’ গত ২৭ জুন নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে পূর্বাচল এলাকায় প্রকাশ্য দিবালোক প্রযোজক ও ব্যবসায়ী রাশেদকে অপহরণ করা হয়। জানা যায়, অপহরণের খবর পেয়ে রাশেদের পরিবার দ্রুত পূর্বাচল সেনা ক্যাম্পে অভিযোগ জানায়। এতে অপহরণকারীরা চাপে পড়ে যায় এবং রাশেদকে ‘আওয়ামী লীগ কর্মী’ পরিচয়ে রূপগঞ্জ থানায় সোপর্দ করার চেষ্টা করে। পরে পুলিশ উভয় পক্ষকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফাজতে নেয়। অপহরণের সত্যতা পাওয়ায় ৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন এই প্রযোজক। বর্তমানে হামলাকারীরা কারাগারে রয়েছে। চলচ্চিত্র প্রযোজক রাশেদ বলেন, ‘২০১৮ সালে একটি ধর্ষণ ও হত্যা মামলা দায়ের করি। সেই মামলা তুলে না নেওয়ায় এই অপরহণ করা হয়। মামলা তুলে নিতে দীর্ঘদিন চাপ সৃষ্টি করে আসছিল এই চক্রটি। মামলাটি তুলে না নেওয়ায় গত শুক্রবার দুপুরে পূর্বাচল ১৩ নম্বর সেক্টরের অফিস থেকে আমাকে অপহরণ করা হয়। অপহরণের পর আমার পরিবারের কাছে ৭০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে অপহরণকারীরা।’ রাশেদের ভাষ্য অনুযায়ী, পূর্বাচলের কথিত যুবদল নেতা রাসেল আহমেদের নেতৃত্বে ৮-১০ জন যুবক দুপুর আড়াইটার দিকে অফিসে ঢুকে জোরপূর্বক তুলে নিয়ে যায়। অভিযুক্ত রাসেল ও তার লোকজনের বিরুদ্ধে ২০১৮ আমার চাচাতো ভাই রাকিবের মেয়ে সুবর্ণাকে অপহরণ, ধর্ষণ ও হত্যার অভিযোগে মামলা রয়েছে। সেই মামলাটিই এখন তুলে নেওয়ার জন্য তাদের উপর দীর্ঘদিন ধরেই হুমকি দিয়ে আসছিল অভিযুক্ত চক্র। রূপগঞ্জ থানা ওসি তরিকুল ইসলাম জানায়, এ ঘটনায় অভিযুক্ত যুবদল নেতা রাসেল মিয়াসহ চক্রের ছয় সদস্য—রাসেল, শান্ত, রনি, শিপলু সাব্বির ও রনিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ঘটনার বিষয়ে নারায়ণগঞ্জের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) মেহেদী ইসলাম বলেছেন, ‘তাকে আওয়ামী লীগ কর্মী হিসেবে থানায় সোপর্দ করার চেষ্টা করা হলেও এখন পর্যন্ত তার সে রকম কোনো রাজনৈতিক পরিচয়ের প্রমাণ আমরা পাইনি।’ সালমান শাহর সবচেয়ে সুপারহিট সিনেমা ‘স্বপ্নের ঠিকানা’ নামে কয়েক বছর আগে একটি শুটিং স্পট নির্মাণ করেন মো. রাশেদুল ইসলাম রাশেদ। নিয়মিত সেখানে নাটক-সিনেমার শুটিং হয়। রাশেদ ‘নিশ্চুপ ভালোবাসা’ নামের একটি সিনেমা প্রযোজনা করেছেন। পাশাপাশি বেশকিছু নাটক, সিনেমা এবং মিউজিক ভিডিওতে অভিনয় করেছেন। এ ঘটনায় চলচ্চিত্রপাড়ায় ব্যাপক চাঞ্চল্য ও উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।