বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের ‘লাথি-ঘুষি মারা’ সেই ওসিকে বদলি

প্রকাশ : ০৮ জুলাই ২০২৫, ২০:১২ | অনলাইন সংস্করণ

  আমার বার্তা অনলাইন:

রংপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার অভিযোগে মেট্রোপলিটন তাজহাট থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহ্ আলম সরদারকে বদলি করা হয়েছে। বর্তমানে তাকে গোয়েন্দা পুলিশ ইউনিটে সংযুক্ত করা হয়েছে। ঘটনার সময় তিনি মেট্রোপলিটন কোতোয়ালি থানায় ওসি (তদন্ত) হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন।

মঙ্গলবার (০৮ জুলাই) বিকেলে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ (আরপিএমপি) কমিশনার মো. মজিদ আলী। 

জানা গেছে, চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর আন্দোলনকারীদের মিছিলে হামলার ঘটনায় জড়িত বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্যকে বদলি করা হয়। কিন্তু ব্যতিক্রম ছিলেন শাহ আলম সরদার। বরং তাকে শাস্তির পরিবর্তে ওসি (তদন্ত) থেকে পূর্ণ ওসি হিসেবে ১৭ সেপ্টেম্বর তাজহাট থানার দায়িত্ব দেওয়া হয়। সম্প্রতি এ নিয়ে বিভিন্ন মহলে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হলে মঙ্গলবার তাকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।

এদিকে শিক্ষার্থীদের পেটানোর ঘটনায় জড়িত ওসি শাহ আলম সরদারকে বদলির সিদ্ধান্তকে দায়ীদের ‘রক্ষা ও উৎসাহ দেওয়ার নমুনা’ হিসেবে দেখছেন জুলাই আন্দোলনের বিপ্লবীরা। তাদের মতে, দায়মুক্তি নিশ্চিত করতেই ওসি শাহ আলমকে বদলি করা হয়েছে।

আন্দোলনকারী কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অংশ হিসেবে গত বছরের ১৬ জুলাই রংপুর জিলা স্কুলের সামনে জড়ো হন কয়েক শতাধিক শিক্ষার্থী। সেখান থেকে তারা একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে টাউন হলের দিকে অগ্রসর হলে পুলিশ লাইন্স মোড়ে এসে বাধার মুখে পড়েন। পুলিশ মিছিলটি ছত্রভঙ্গ করতে বেধড়ক লাঠিচার্জ করে।

অভিযোগ রয়েছে, কোতোয়ালি জোনের তৎকালীন সহকারী কমিশনার আরিফুজ্জামান ও কোতোয়ালি থানার তৎকালীন ওসি (তদন্ত) শাহ আলম সরদারের নির্দেশেই ওই লাঠিচার্জ চালানো হয়। আন্দোলনকারীদের ওপর হামলায় নিজেও অংশ নেন ওসি শাহ আলম। এমন একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরালও হয়েছে।

ভিডিওচিত্র ও আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত বছরের ১৬ জুলাইয়ের সেই মিছিলে পুলিশের লাঠিচার্জ শুরু হলে শিক্ষার্থীদের লাথি ও ঘুষি মারতে শাহ আলম সরদারকে দেখা যায়। পুলিশ লাইন্স মোড়ে মিছিল ছত্রভঙ্গ করার সময় শাহ আলম সরদার শিক্ষার্থীদের শরীরের বিভিন্ন অংশে আঘাত করছেন। এ সময় তার নেতৃত্বে অন্যান্য পুলিশ সদস্যরাও আন্দোলনকারীদের ওপর বেপরোয়াভাবে লাঠিচার্জ এবং শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন।

আবু সাঈদ হত্যা মামলার অন্যতম সাক্ষী ও বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শাহরিয়ার সোহাগ বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে যেসব পুলিশ সদস্য আন্দোলন দমন করতে ‘ম্যাসাকার’ চালিয়েছিলেন, তাদের শুধু এক জেলা থেকে আরেক জেলায় বদলি করা হয়েছে। ওসি শাহ আলম সরদারের ক্ষেত্রেও একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হয়েছে। তাকে জবাবদিহির আওতায় আনা হয়নি বরং কেবল পদায়ন করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানের ঘটনাগুলোতে যদি সুবিচার নিশ্চিত না হয়, তবে দেশে আবারও ফ্যাসিবাদ ফিরে আসবে।

বদলির বিষয়ে রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ (আরপিএমপি) কমিশনার মো. মজিদ আলী বলেন, তাজহাট থানার ওসিকে সরানো হয়েছে। তাকে বর্তমানে গোয়েন্দা ইউনিটে বদলি করা হয়েছে। তবে কি অভিযোগে তাকে সরানো হয়েছে, তা তিনি উল্লেখ করেননি।


আমার বার্তা/এমই