উচ্ছেদ করা ফুটপাত ফের দখল করে নির্মাণকাজ চালাচ্ছে চসিক

প্রকাশ : ২২ জুন ২০২৫, ১১:১০ | অনলাইন সংস্করণ

  আমার বার্তা অনলাইন

চট্টগ্রাম নগরের গুরুত্বপূর্ণ এলাকা কাজির দেউরি মোড়ে ফের ফুটপাত দখলের অভিযোগ উঠেছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) বিরুদ্ধে। আউটার স্টেডিয়াম সংলগ্ন পুলিশ বক্সের পাশের প্রায় ১০০ ফুট ফুটপাত ঘিরে সেখানে নতুন করে নির্মাণকাজ শুরু করেছে সংস্থাটি।

শনিবার (২১ জুন) বিকেলে সরেজমিন দেখা যায়, পুরো অংশটি টিন দিয়ে ঘিরে ফেলা হয়েছে এবং সেখানে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্মাণ কাজ চলিতেছে, বিনা অনুমতিতে প্রবেশ নিষেধ— লেখা কয়েকটি ব্যানার সাঁটানো রয়েছে।

জানা যায়, স্টেডিয়াম সংলগ্ন ফুটপাত এলাকায় ২০১৮ সালে তৎকালীন মেয়র আ.জ.ম নাছির উদ্দীন বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে লিজ দিয়েছিলেন। সৌন্দর্য বর্ধন প্রকল্পের আওতায় পাঁচ বছরের জন্য ই-টেন্ডারের মাধ্যমে দোকানগুলো বরাদ্দ দেওয়া হয়। পরবর্তী সময়ে সেখানে কয়েক কোটি টাকা ব্যয়ে গড়ে তোলা হয় ফুড জোন, পাবলিক টয়লেট, যাত্রী ছাউনি, ট্রাফিক পুলিশ বক্স ও নার্সারি।

তবে ফুটপাত দখল করে গড়ে তোলা এসব স্থাপনা জনসাধারণের চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করায় এগুলো উচ্ছেদ করে জেলা প্রশাসন। ২০২৩ সালের ১৯ মার্চ তৎকালীন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নু-এমং মারমা মং-এর নেতৃত্বে একটি অভিযান পরিচালিত হয়। ওই অভিযানে নার্সারি, রেস্তোরাঁসহ বেশ কয়েকটি দোকান গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। যেগুলোকে তখন অবৈধ স্থাপনা হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছিল। তৎকালীন জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান স্পষ্ট জানিয়েছিলেন, স্থাপনাগুলো নির্মাণ আইনসম্মত ছিল না।

উচ্ছেদের পর প্রশাসন ২০২৩ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর থেকে এক কোটি ১০ লাখ টাকা ব্যয়ে সেখানে উন্নয়ন কাজ শুরু করে। আউটার স্টেডিয়াম ও ফুটপাত আধুনিকায়ন এবং স্টেডিয়ামের সীমানা নির্ধারণসহ জনসাধারণের জন্য হাঁটাচলার ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়। গাছ লাগিয়ে সৌন্দর্য বর্ধন করার পর বদলে যায় পুরো এলাকা। সম্প্রতি আবারও চসিক কর্তৃক সেই জায়গায় দোকান নির্মাণের উদ্যোগ দেখা গেছে। যেটি নিয়ে পথচারীদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে।

সচেতন নাগরিকরা বলছেন, ফুটপাত মূলত পথচারীদের জন্য, বিশেষত দৃষ্টিহীন ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের নির্বিঘ্ন চলাচলের জন্য মাঝখানে একটি নির্দিষ্ট চিহ্ন থাকে। অথচ চসিক সেই চিহ্নিত অংশেই দোকান নির্মাণ করছে, যা আইনগতভাবেও প্রশ্নবিদ্ধ এবং নৈতিকভাবেও অগ্রহণযোগ্য। সরকারি সংস্থা নিজেরাই যদি ফুটপাত দখল করে, তাহলে করার কিছু নেই? নগর উন্নয়নের নামে এটি দায়িত্বহীন আচরণের একটি দৃষ্টান্ত।

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী সালমা আক্তার বলেন, এই ফুটপাতের মাঝখানে একটা দাগ দেওয়া আছে, যেটা বিশেষভাবে প্রতিবন্ধী ও দৃষ্টিহীন মানুষের জন্য। অথচ চসিক সেই অংশে দোকান বসাচ্ছে। তারা সরাসরি জনগণের হাঁটার অধিকার কেড়ে নিচ্ছে। এটা উন্নয়ন নয়, বরং এক ধরনের দখলবাজি। নাগরিকদের স্বার্থ রক্ষার বদলে যদি কর্তৃপক্ষই লোভের ফাঁদে পড়ে, তাহলে আমরা কোথায় যাব?

কাজির দেউরি এলাকায় নিয়মিত আসেন আফসার উদ্দিন, তিনি একজন বেসরকারি চাকরিজীবী। তিনি বলেন, প্রতিদিন অফিসে যাওয়ার সময় কাজির দেউরি দিয়ে হেঁটে যাই। একসময় ফুটপাতটা অবৈধ দোকানপাটে ভরে গিয়েছিল। প্রশাসন যখন ওইগুলো উচ্ছেদ করে কিছু কাজ করেছে। এখন আবার দেখছি চসিক দোকান তুলছে।

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) চট্টগ্রাম জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আখতার কবির চৌধুরী ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিভিন্ন পদে চেহারা পরিবর্তন হয়েছে। বাস্তবে কোনো পরিবর্তন হয়নি। আগের লোকেরাও অনিয়ম ও দুর্নীতি করেছে, এখনো হচ্ছে। এটি দুঃখজনক।

তিনি আরও বলেন, চসিকের শীর্ষ পদে যিনি আছেন, তিনি ৫ আগস্টের পরিবর্তনের পর বসেছেন। এত লোকের প্রাণহানির পর যিনি পদে বসেছেন, তার প্রতি জনগণের অনেক প্রত্যাশা। কিন্তু তিনি যদি আগের মতো জনগণের হাঁটার পথ দখল করেন, তাহলে করার কিছু নেই। আমি আহ্বান জানাচ্ছি চসিক যেন এই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে।

এ বিষয়ে জানতে চসিকের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলামকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তারা রিসিভ করেননি।

তবে সিটি কর্পোরেশনের এক কর্মকর্তা জানান, ফুটপাতে কয়েকটি দোকান নির্মাণের কাজ চলছে। বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে দোকানগুলো ভাড়া দেওয়া হচ্ছে।


আমার বার্তা/জেএইচ