এই শুক্রবার ১৫টি চাকরির পরীক্ষা!
প্রকাশ : ২০ অক্টোবর ২০২২, ১৭:১৮ | অনলাইন সংস্করণ
বিশেষ প্রতিনিধি :
রাষ্ট্রায়াত্ত ১০টি প্রতিষ্ঠান আর বেসরকারি বাকী ৫টি মোট ১৫টি চাকরির জন্য একই দিন একই সময় নির্ধারণ করা আছে। আগামীকাল শুক্রবার ২১ অক্টোবর এমনই একটি সমন্বয়হীন শিডিউল প্রকাশিত হয়েছে।
প্রকাশিত শিডিউল অনুযায়ি এ দিন সমাজসেবা অধিদপ্তর; কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর; বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ড; ইলেক্ট্রিসিটি জেনারেশন কোম্পানি অব বাংলাদেশ লিমিটেড; বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআউডব্লিউটিএ); চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ; বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স; হিসাব মহানিয়ন্ত্রকের কার্যালয়; বাংলাদেশ ডেটা সেন্টার কোম্পানি লিমিটেড (বিডিসিসিএল); বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষ (বেপজা); বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম ইনস্টিটিউট; কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট ট্রেনিং একাডেমি; প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউট; প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রিমিয়ার ব্যাংক লিমিটেডের বিভিন্ন পদে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।
সমন্বয় হীন ভাবে একই দিনে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, ইনস্টিটিউট, অধিদপ্তর ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরির পরীক্ষার সময়সূচি নির্ধারনণ হওয়ায় চরম বিপাকে পড়েছেন লাখ লাখ চাকরিপ্রার্থী।
শুক্রবার ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন কেন্দ্রে এসব পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। প্রায় ১০ লাখ চাকরিপ্রার্থী এদিন ১৫টি প্রতিষ্ঠানের চাকরির পরীক্ষায় অংশ নেবেন।
এগুলোর মধ্যে সমাজসেবা অধিদপ্তরের ইউনিয়ন সমাজকর্মী পদে সবচেয়ে বেশি ৬ লাখ ৬২ হাজার ২৭০ জন আবেদনকারী আছেন। আবেদনকারীদের নিজ জেলায় সকাল ১০টা থেকে এ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা আছে।
চাকরিপ্রার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অনেকের একই দিনে ২ থেকে ৫টি পর্যন্ত পরীক্ষার তারিখ পড়েছে। এরমধ্যে একটা হয়তো ঢাকায়, অন্যটা নিজ জেলায়। এক্ষেত্রে একটার বেশি পরীক্ষা দেওয়া তাদের পক্ষে সম্ভব না।
এর আগে গত বছরের অক্টোবর মাসেও একই দিনে ১৫ থেকে ১৬টি করে চাকরির পরীক্ষা নেওয়া হয়েছিল। তখন প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, মহামারির কারণে নিয়োগ পরীক্ষা বন্ধ ছিল। বিধি-নিষেধ উঠে যাওয়ায় সব প্রতিষ্ঠান জমে থাকা পরীক্ষাগুলো নেওয়া শুরু করেছে। তাই একইসঙ্গে এতগুলো পরীক্ষার তারিখ পড়েছে।
আগামীকাল শুক্রবার বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআউডব্লিউটিএ) নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নেবেন ৪ হাজার ৭৩৭ জন।
একই দিনে এতগুলো প্রতিষ্ঠানের চাকরির পরীক্ষা না নিয়ে নিজেদের মধ্যে সমন্বয় একাধিক দিনে পরীক্ষাগুলো নেওয়া সম্ভব ছিল কি না জানতে চাইলে বিআউডব্লিউটিএ'র চেয়ারম্যান কমডোর গোলাম সাদেক বলেন, 'পৃথক অর্গানাইজেশনগুলোর তো আর কোনো কো-অর্ডিনেশনের মাধ্যমে পরীক্ষা হয় না। সবার সঙ্গে কো-অর্ডিনেশন করতে গেলে কেন্দ্রীয়ভাবে পরীক্ষাগুলো নিতে হবে। এতে আরও বড় ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হবে। কোভিডের কারণে অনেক নিয়োগ প্রক্রিয়া পিছিয়ে গেছে, যার কারণে খুব তাড়াতাড়ি অল্প সময়ের মধ্যে সব করতে হচ্ছে।'
চাকরির পরীক্ষার তারিখ নির্ধারণের ক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সমন্বয়ের সুযোগ আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'আপাতত সমন্বয়ের সুযোগ নেই। এগুলো সব সায়ত্ত্বশাসিত সংস্থা এবং যখন যে পদ শূন্য হচ্ছে তখন তারা পরীক্ষা নিয়ে নিয়োগ দিচ্ছে। একশর বেশি সংস্থা আছে। তাদের মধ্যে কি সমন্বয় করা সম্ভব। তারপরও আমি চেষ্টা করে দেখবো, মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা বলব।'
রাসেল আরও বলেন, 'প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ও বেপজা একই দিনে আবার একাধিক পদে পরীক্ষা নিচ্ছে। কোনো প্রতিষ্ঠান একই দিনে একাধিক পরীক্ষা নিলে আগে থেকে জানাতে পারত। তাহলে সবগুলোতে আবেদন করে টাকা নষ্ট করতাম না।'
এই চাকরিপ্রার্থীর ভাষ্য, 'একদিনে অনেকগুলো পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কারণে আমরা যেমন আবেদন করেও পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার সুযোগ হারাচ্ছি, তেমনি যারা এখনও শিক্ষার্থী; টাকা-পয়সার টানাটানি আছে; তাদের প্রতি এটা আরও অবিচার।'
'শুক্রবার সমাজসেবা অধিদপ্তর ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে দুটো পরীক্ষা হবে। এরমধ্যে একটি আমার নিজ জেলা নরসিংদীতে, অন্যটি ঢাকায় হবে। তাই চাইলেও আমি কোনোভাবেই একটার বেশি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারব না' এভাবেই নিজের দুর্ভোগের কথা তুলে ধরেন এক শিক্ষার্থী।
এ ব্যাপারে চাকরীপ্রার্থীদের প্ল্যাটফর্ম 'চাকরিপ্রত্যাশী যুব প্রজন্ম'র সমন্বয়ক সাজিদ সেতুর বক্তব্য, 'একজন প্রার্থী যখন টাকা খরচ করে পরীক্ষার জন্য আবেদন করছেন, তখন তার পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার অধিকার রয়েছে। তাদের কাছে থেকে আবেদন ফি নেওয়া হচ্ছে, আবার সমন্বয়হীনভাবে একই দিনে একাধিক পরীক্ষা নিয়ে তাদের পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করা থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। যেভাবেই হোক না কেন- এটি এক ধরনের প্রতারণা।'
একই দিনে একাধিক পরীক্ষার বিষয়ে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য (প্রশাসন ও পরিকল্পনা) যুগ্ম সচিব মো. জাফর আলমের ভাষ্য, 'আমাদের সঙ্গে এ ধরনের সমস্যা কম হয়। আমরা বেশিরভাগ সময় ওয়ার্কিং ডে-তে পরীক্ষা নেই। পাবলিক সার্ভিস কমিশন বা এ রকম কোনো সংস্থাকে দিয়ে যদি কেন্দ্রীয়ভাবে এ ধরনের পরীক্ষা নেওয়া হতো তাহলে তারা সমন্বয় করে দিতে পারত। সেটা খুব ভালো একটা উদ্যোগ হতো।'