ছাত্রদলের কমিটিতে ছাত্রলীগ কর্মী-মাদকসেবী-র‌্যাগিংয়ে দণ্ডিতরা

প্রকাশ : ১০ আগস্ট ২০২৫, ১৪:৫৩ | অনলাইন সংস্করণ

  আমার বার্তা অনলাইন:

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) শাখা ছাত্রদলের বর্ধিত আহ্বায়ক কমিটি ও ১৭টি হলে দেওয়া নতুন কমিটিতে ছাত্রলীগ কর্মী, মাদকসেবী, ছিনতাইকারী, নারী নিপীড়ক ও র‌্যাগিংয়ে দণ্ডিতদের স্থান পাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে ক্যাম্পাসে সমালোচনা চলছে। নেতারা বলছেন, তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

জানা যায়, শুক্রবার (৮ আগস্ট) কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির সই করা বিজ্ঞপ্তিতে বর্ধিত আহ্বায়ক কমিটি অনুমোদন করা হয়। এছাড়া জাবি শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক জহির উদ্দীন মোহাম্মদ বাবর ও সদস্যসচিব ওয়াসিম আহমেদ অনিক অনুমোদিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে হল কমিটি ঘোষণা করা হয়।

ঘোষিত দুই ধরনের কমিটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, কমিটিতে ২০ জনের বেশি ছাত্রলীগ কর্মী, ৬ জন মাদক সেবনে অভিযুক্ত, ৩ জন র‌্যাগিংয়ে, একজন ছিনতাই ও একজন ভ্রূণ হত্যায় অভিযুক্ত পদ পেয়েছেন।

তাদের বিষয়ে ছাত্রলীগে জড়িত থাকার স্ক্রিনশট-ছবি, মাদক, ছিনতাই ও র‌্যাগিংয়ের অভিযোগপত্র এবং গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ রয়েছে।

বর্ধিত কমিটি ও হল কমিটির পদধারীদের মধ্যে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, এমন অভিযুক্তরা হলেন- যুগ্ম-আহ্বায়ক ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী শাকুর বাপ্পী, সদস্য পদপ্রাপ্ত ৪৫তম ব্যাচের আবু বক্কর সিদ্দিক সোহাগ, ৪৯তম ব্যাচের আল আমিন, সাবরিনা সুলতানা সুরভী, ৫০তম ব্যাচের সাইফ বিন মাহবুব, কাজী মৌসুমি আফরোজ, শাহাদাত হোসেন আকুল, শাবাব সবুজ অর্নব, জাহিদ খান, ফিরোজ আহমেদ রিমন, সোহাগ আহমেদ। এছাড়াও ৫১তম ব্যাচের রাশেদ ইসলাম, শিপন হোসেন, সতীর্থ বিশ্বাস বাধন, ইমরান নাজিজ, মো. হাসান মাহমুদ, আব্দুল্লাহ আলিফ, খাইরুল ইসলাম নাহিদ, মো. রাকিব মাওলা, রাশেদ ইসলাম, মিজানুর রহমান ফায়েজ এবং ৫২তম শিক্ষার্থী নিয়ামুল মেরাজ মাহিন।

তাদের মধ্যে যুগ্ম-আহ্বায়ক শাকুর বাপ্পি বিশ্ববিদ্যালয়ের কামাল উদ্দিন হলের ছাত্রলীগের সক্রিয় সদস্য ছিলেন। সদস্য আবু বক্কর সিদ্দিক সোহাগের নামে চোরাই বাইক বিক্রি, নিরাপত্তা কর্মীকে মারধরের অভিযোগ রয়েছে। তিনিও ছাত্রলীগের রাজনীতিতে যুক্ত ছিলেন। সদস্য আল আমিন ১০ নম্বর হল ছাত্রলীগের সক্রিয় রাজনীতি করতেন ও বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সেক্রেটারি হাবিবুর রহমানের অনুসারী ছিলেন। ফজিলাতুন্নেসা হলের সেক্রেটারি সাবরিনা সুলতানা সুরভী শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আখতারুজ্জমান সোহেলের অনুসারী ছিলেন। ১০ নম্বর হলের সভাপতি সাইফ বিন মাহবুব ছাত্রলীগ নেতা লিটনের অনুসারী ছিলেন। রোকেয়া হলের সভাপতি কাজী মৌসুমি আফরোজ ৫ আগস্টের আগে রোকেয়া হলের ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী ছিলেন। সদস্য শাহাদাত হোসেন আকুল বিশ্ববিদ্যালয়ের মওলানা ভাসানী হলে ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী ছিলেন। সদস্য শাবাব সবুজ অর্ণব ২১ নম্বর হলের ছাত্রলীগের সক্রিয় রাজনীতি করতেন এবং হাবিবুর রহমান লিটনের অনুসারী ছিলেন। শহীদ রফিক জব্বার হলের সভাপতি জাহিদ খানও ছাত্রলীগের রাজনীতিতে যুক্ত ছিলেন।

এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনামূলক সাহিত্য ও সংস্কৃতি ইন্সটিটিউটের শিক্ষার্থী শিপন হোসেন ও সতীর্থ বিশ্বাস বাধন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী ছিলেন এবং মাদক সেবনের সম্পৃক্ততায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন তাদের এক বছরের জন্য বহিষ্কার করেছিল। সদস্য ইমরান নাজিজ ২১ নম্বর হল ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী ছিলেন এবং বহিরাগত চার স্কুলছাত্র থেকে ছিনতাইয়ের অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাকে ছয় মাসের জন্য বহিষ্কার করেছিল।

তাজউদ্দিন আহমেদ হলের সেক্রেটারি মো. হাসান মাহমুদ বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০ নম্বর হলে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তিনি ছাত্রলীগের সেক্রেটারি লিটনের অনুসারী ছিলেন। শহীদ সালাম বরকত হলের সেক্রেটারি আব্দুল্লাহ আলিফ হলে ছাত্রলীগের ব্লকে থাকতেন ও কর্মসূচিগুলোতে অংশ নিতেন।

কামাল উদ্দিন হলের সিনিয়র সহ-সভাপতি খাইরুল ইসলাম নাহিদ ২১ নম্বর হল ছাত্রলীগের রাজনীতিতে যুক্ত ছিলেন ও হল ছাত্রলীগের ব্লকে থাকতেন। কাজী নজরুল হলের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. রাকিব মাওলা আল বেরুনী হলে ছাত্রলীগ করতেন। সদস্য রাশেদ ইসলাম ভাসানী হলের ছাত্রলীগের রাজনীতিতে যুক্ত ছিলেন। মিজানুর রহমান ফায়েজের নামে বিশ্ববিদ্যালয়েল শিক্ষার্থীদের ওপর হামলায় অভিযুক্তদের পুনর্বাসনের অভিযোগ রয়েছে।

অন্যদিকে কমিটিতে পদ পেয়েছেন ভ্রূণ হত্যায় অভিযুক্ত সৈয়দ শাহ শাফায়েত ঋদ্ধ। তিনি ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের ৪৯তম ব্যাচের সাবেক শিক্ষার্থী ও বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিন্যান্স বিভাগে প্রফেশনাল বিভাগে মাস্টার্সে অধ্যয়নরত। ঋদ্ধের বিরুদ্ধে এ বছরের ৯ মে জাবির যৌন নিপীড়ন সেলে এক নারী শিক্ষার্থী বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে জোরপূর্বক গর্ভপাত করানোর অভিযোগ করেন।

এছাড়াও কমিটিতে পদ পেয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনামূলক সাহিত্য ও সংস্কৃতি ইন্সটিটিউটের ৫২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী শুভজিৎ বিশ্বাস আব্দুস সায়েম, আশরাফুল ইসলাম শামিম। এর মধ্যে শুভজিৎ বিশ্বাসকে শহীদ রফিক জব্বার হলে জুনিয়রকে র‌্যাগিংয়ের অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন দুই বছরের জন্য বহিষ্কার করে এবং কিছুদিন আগে ঢাকার একটি মন্দিরে নাশকতার অভিযোগে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। ছাড়া পেয়ে ছাত্রদলের রাজনীতিতে সক্রিয় হয়েছেন তিনি। এছাড়া আব্দুস সায়েম ও আশরাফুল ইসলাম শামিমকে র‌্যাগিংয়ের দায়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সতর্ক করে ও অর্থদণ্ড দেয়।

অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের শিক্ষার্থী সাদিক ইয়াসির গত ৪ আগস্ট কাজী নজরুল ইসলাম হলে মাদক সেবনকালে আটক হন। সদস্য ৫২ব্যাচের শিক্ষার্থী মো. জেরিন বিশ্ববিদ্যালয়ে মাদক সেবনকালে আটক হন। এছাড়া শহীদ রফিক-জব্বার হলের সিনিয়র সহ-সভাপতি আবেশ আল মুবিন নাফির নামে মাদক গ্রহণের অভিযোগ রয়েছে। তিনি বিশ্ববিদ্যালয় ড্রপআউট শিক্ষার্থী ।

এ বিষয়ে জানতে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা শাখা ছাত্রদলের নেতাদের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন।

শাখা ছাত্রদলের সদস্যসচিব ওয়াসিম আহমেদ অনিক বলেন, তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ভাসানী হলে কমিটি বিলুপ্ত করা হয়েছে, অন্য হলগুলোতেও প্রমাণ সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক জহির উদ্দিন মোহাম্মদ বাবর বলেন, যথেষ্ট যাচাইবাছাই করে কমিটি দেওয়া হয়েছে। কারো বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রমাণ পেলে আমরা সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেবো।

আমার বার্তা/এল/এমই