নিটোরের ফিজিওথেরাপিস্ট শিক্ষার্থীদের ভাতার দাবিতে দ্বিতীয় দিনের মত কর্মসূচি
প্রকাশ : ২০ মে ২০২৫, ১৩:০২ | অনলাইন সংস্করণ
আমার বার্তা অনলাইন:

ন্যায্য ভাতা পাওয়ার দাবিতে দ্বিতীয় দিনের মতো কর্মবিরতি ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানের (নিটোর) ইন্টার্ন ফিজিওথেরাপিস্ট শিক্ষার্থীরা।
মঙ্গলবার (২০ মে) বেলা ১১টা থেকে নিটোরের পরিচালকের কার্যালয়ের সামনে এ কর্মসূচি শুরু হয়।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, দীর্ঘ আট মাস ধরে সংশ্লিষ্ট দপ্তর ও কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানানো হলেও কোনো সমাধান আসেনি। বরং নানা অজুহাতে সময়ক্ষেপণ এবং দায়িত্ব এড়িয়ে যাওয়ার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভাতা দাবিতে নিটোরের ইন্টার্ন ফিজিওথেরাপিস্টদের আন্দোলন নতুন নয়। দীর্ঘদিন ধরে এই দাবির বিষয়ে বারবার যোগাযোগ করা হলেও এখন পর্যন্ত কর্তৃপক্ষ কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি বলে অভিযোগ করছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। তাদের ভাষায়, ‘আমাদের ন্যায্য অধিকারকে এক প্রকার অস্বীকারই করা হচ্ছে।’
বাংলাদেশ ফিজিওথেরাপিস্ট স্টুডেন্টস ইউনিয়নের (বাপসু) সেক্রেটারি মো. আব্দুর রহমান জানান, মঙ্গলবার বেলা ১১টায় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠকের কথা থাকলেও তা এখনো হয়নি। তিনি বলেন, “সোমবার (১৯ মে) আমরা শান্তিপূর্ণভাবে দুপুর ১২টা থেকে ২টা পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছি। প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমাদের দাবির যৌক্তিকতা স্বীকার করা হলেও কোনো আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত বা অগ্রগতি হয়নি।”
তিনি আরও বলেন, “পরিচালক স্যার মন্ত্রণালয়ে থাকায় বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন যুগ্ম পরিচালক, একাডেমিক পরিচালক এবং ড্যাবের কয়েকজন প্রতিনিধি। তারা বলেছেন, এই বৈঠক আনঅফিশিয়াল। আমাদের দাবির বিষয়ে পরিচালকের সঙ্গে আলোচনা করা হবে। কিন্তু এ প্রতিশ্রুতি আমরা বহুবার পেয়েছি, বাস্তবে কিছুই হয়নি।”
এক শিক্ষার্থী ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, “সবাই শুধু বলছে—দাবি যৌক্তিক, অধিকার ঠিক আছে। কিন্তু কার্যত কেউই আমাদের পাশে দাঁড়াচ্ছে না। একজন পরিচালক পর্যন্ত আমাদের সঙ্গে সময় দিতে রাজি নন, অথচ আমরা দিনের পর দিন ঘুরছি। ছাত্রীদেরও মাসের পর মাস এমন অবস্থার ভেতর দিয়ে যেতে হচ্ছে।”
আরেক শিক্ষার্থী জানান, স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরে একাধিকবার আবেদন-নিবেদন, ডেটা উপস্থাপন, চিঠি-পাত্রী পাঠানো হলেও সর্বশেষ চিকিৎসা শিক্ষা পরিচালক ডা. মহিউদ্দিন মাতাব্বর জানিয়েছেন, “ভর্তি পরীক্ষাও আমরা নিই না, ভর্তিও আমরা করাই না। নিটোর কর্তৃপক্ষ যেহেতু নিয়োগ করে, তোমাদের দাবি তাদের কাছেই জানাও।”
শিক্ষার্থীদের বক্তব্য অনুযায়ী, এই ধরনের বারবার ‘দায় এড়িয়ে চলা’ এখন তাদের মনে ক্ষোভ ও হতাশার জন্ম দিয়েছে।
বাপসু সেক্রেটারি আব্দুর রহমান জানান, “যতদিন আমাদের ন্যায্য ভাতা দেওয়া না হবে, ততদিন এই কর্মসূচি চলবে। কেউ এখান থেকে যাবে না। আমরা ইন্টার্নশিপ করছি, পূর্ণাঙ্গ দায়িত্ব পালন করছি—অথচ ভাতা না দিয়ে আমাদের শ্রমকে অবহেলা করা হচ্ছে। এটি মেনে নেওয়া যায় না।”
অবস্থানে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা জানান, তারা কোনো হঠকারী সিদ্ধান্তে যেতে চান না। দাবি আদায়ের লক্ষ্যে এখনো তারা শান্তিপূর্ণ পথেই রয়েছেন। তবে দাবি পূরণে দীর্ঘসূত্রতা চলতে থাকলে ভবিষ্যতে আরও বড় কর্মসূচির দিকে যেতে তারা বাধ্য হবেন।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশের চিকিৎসা খাতের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো নিটোরে প্রতিবছর শতাধিক ফিজিওথেরাপি শিক্ষার্থী ইন্টার্ন হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। কিন্তু চিকিৎসা সহায়তাকারী এই শিক্ষার্থীরা সরকারি চিকিৎসা শিক্ষানীতির আওতায় না পড়ায় তাদের ভাতা সংক্রান্ত একটি স্পষ্ট নীতিমালা এখনো গঠিত হয়নি। ফলে চিকিৎসকদের মতো ইন্টার্ন ফিজিওথেরাপিস্টরা কোনো সম্মানি পান না।
গত আট মাস ধরে এই বৈষম্যের অবসান চেয়ে একাধিকবার স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও নিটোর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে শিক্ষার্থীরা যোগাযোগ করেছে। দাবি উঠেছে, চিকিৎসা পেশায় কাজ করা অন্য ইন্টার্নদের মতো ফিজিওথেরাপিস্টদেরও সম্মানজনক ভাতা দিতে হবে।
তবে দায়িত্বশীল সংস্থাগুলোর মধ্যে এই বিষয়ে দায় চাপানোর প্রবণতা এবং বারবার আশ্বাস দিয়ে দীর্ঘসূত্রতা তৈরির কারণে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভ ও অসন্তোষ দিন দিন বাড়ছে। আন্দোলনকারীদের মতে, এটা শুধু অর্থনৈতিক দাবি নয়, বরং এটা সম্মান ও পেশাগত স্বীকৃতির লড়াইও।
আমার বার্তা/এল/এমই