প্রশাসনের ‘উদ্ভট’ সিদ্ধান্তে বৈষম্যের শিকার কুবি শিক্ষকরা 

প্রকাশ : ২৮ নভেম্বর ২০২২, ১৪:২৬ | অনলাইন সংস্করণ

  হাবিবুর রহমান, কুবি

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুবি) শিক্ষকরা প্রশাসনের ‘উদ্ভট’ সিদ্ধান্তে বৈষম্যের শিকার হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে সম্প্রতি। সরকারি আয়ে কৃচ্ছ্রসাধনের নামে নেওয়া বিশ্ববিদ্যালয় (কুবি) প্রশাসনের ‘উদ্ভট’ সিদ্ধান্তের বাড়তি  সুবিধা ভোগ করছে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এছাড়া রেজুলেশনে সভায় নেওয়া সিদ্ধান্তের হেরফের ঘটেছে বলেও অভিযোগ তুলেছেন শিক্ষকরা। 

এদিকে বৃহস্পতিবার সশরীরে ক্লাস নেওয়ার বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত না আসায় ক্ষোভ প্রকাশ করছেন শিক্ষার্থীরা। গত ২৪ আগস্ট বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের কথা বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮৫তম সিন্ডিকেট সভায় শিক্ষা কার্যক্রমের সময়সূচি সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টার পরিবর্তে এক ঘণ্টা এগিয়ে ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়। এ সিদ্ধান্তে একাডেমিক কার্যক্রমের সময় আগের মতোই ৮ ঘন্টা রাখা হলেও প্রশাসনিক কার্যক্রমের সময় এক ঘন্টা কমিয়ে ৯ টা থেকে ৪টা পর্যন্ত ৭ ঘন্টা নির্ধারণ করা হয়।

শিক্ষাসূচির এ সিদ্ধান্ত ৭৩ তম একাডেমিক কাউন্সিলের সুপারিশের ভিত্তিতে সিন্ডিকেটে নেওয়া হলেও গত ১৬ নভেম্বর সাধারণ সভায় পূর্বের শিক্ষাসূচিতে ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় কর্তৃপক্ষ। অর্থাৎ শিক্ষাসূচি আগের মতোই সকাল ৯ টা থেকে ৫ টা পর্যন্ত চলবে। তবে এবারও প্রশাসনিক কার্যক্রম সকাল ৯ টা থেকে ৪ টা পর্যন্ত ৭ ঘন্টা রাখার সিদ্ধান্ত নেয় কর্তৃপক্ষ। তবে এ সভায় কর্মকর্তাদের অফিস কার্যক্রম ৫টা পর্যন্ত চালু করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও রেজুলেশনে ৪টা পর্যন্ত লেখা হয়েছে বলে দাবি করেছেন সভায় উপস্থিত কয়েকজন শিক্ষক। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আলাদা সুবিধা দেওয়ার জন্য এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন সংশ্লিষ্টরা। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষক আমার বার্তাকে বলেন, শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের অফিস টাইমে এমন বৈষম্য দেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে আছে বলে মনে হয় না। এটা অসামঞ্জস্যতার সৃষ্টি করে। অফিস কার্যক্রম বিকাল ৪টা পর্যন্ত চললে শিক্ষা কার্যক্রম কেন ৫টা পর্যন্ত চলবে? এটাতো এক দেশে দুই নীতির মতো অবস্থা। প্রশাসন কি উদ্দ্যেশ্যে কর্মকর্তাদের আলাদা সুবিধা দিচ্ছে?

আবার ৮৫তম সিন্ডিকেট সভায় অন্যান্য সিদ্ধান্তের পাশাপাশি বৃহস্পতিবার অনলাইনে ক্লাস নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ১৬ নভেম্বরের সাধারণ সভায় অন্যান্য সিদ্ধান্ত পরিবর্তন হলেও বৃহস্পতিবার অনলাইনে ক্লাস নেওয়ার সিদ্ধান্ত অপরিবর্তিত রেখেছে প্রশাসন।  অধিকাংশ বিভাগেই অনলাইনে ক্লাস নেওয়া হয় না বলে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে।  যা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। 

তানভীর হোসেন সাকিব নামের এক শিক্ষার্থী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের একটি গ্রুপে বলেন, অনলাইন ক্লাস হলে কিভাবে বিদ্যুৎ সাশ্র‍য় হয় এটা যদি প্রশাসন বুঝিয়ে দিতো তাহলে ভালো হতো।

৬০ জন শিক্ষার্থী  আলাদা আলদা জায়গায় ক্লাস করলে ৬০ টা লাইট, ফ্যান চলবে। আর যদি এক জায়গায় ক্লাস করলে এক রুমে লাইট ফ্যান চলবে।  তাহলে প্রশ্ন হলো বিদ্যুৎ সাশ্র‍য় কোনটায় হলো?

মায়িশা সুবাহ প্রমি নামের লোক প্রশাসন বিভাগের আরেক শিক্ষার্থী আমার বার্তাকে বলেন, করোনার পর আমাদের সেশন জট কমানোর জন্য চার মাসে সেমিস্টার শেষ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে, যা একটি সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত বলে আমার মনে হয়েছিল। সেক্ষেত্রে বৃহস্পতিবার ক্লাস বন্ধ রাখা বিধ্বংসী সিদ্ধান্ত এবং পূর্ববর্তী সিদ্ধান্তের বিরূপ। এর ফলে পড়াশোনা ও ক্যারিয়ারে এর খারাপ প্রভাব পড়বে।  প্রশাসনের উচিত, শিক্ষার্থীদের ক্যারিয়ারের কথা বিবেচনা করে অবিলম্বে বৃহস্পতিবার দিন সহ সপ্তাহে ৫ দিন ক্লাস পরীক্ষা চালু রাখা।

শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. দুলাল চন্দ্র নন্দী আমার বার্তাকে বলেন, মিটিংয়ে  কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরও অফিস সময় ৫টা পর্যন্ত  নির্ধারণ  করা হয়েছিল। কিন্তু রেজুলেশনে  ৪টা পর্যন্ত লেখা হয়েছে। রেজুলেশনে ৪টা পর্যন্ত কেন জিজ্ঞেস করার পর তারা সদুত্তর দিতে পারে নাই। এটা উপাচার্য নতুন চিন্তাভাবনা করে করেছে। এর আগের সিদ্ধান্তও  কেউ সমর্থন করে নাই গত যে মিটিংয়ে যে সিদ্ধান্ত হইছে তাও কেউ সমর্থন করে নাই। এরপরেও রেজুলেশন কেন এভাবে হয় আবার মিটিং হলে জানা যাবে ।

পূর্বে সিন্ডিকেটে যে সিদ্ধান্ত পাস হয়েছে সেটা সাধারণ সভায় নিতে পারে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা প্রশাসন যেভাবে চিন্তা করে সেভাবে সব চাপিয়ে দেয়। আগে তো একটা পদ্ধতি ছিল যে একাডেমিক কাউন্সিলে সিদ্ধান্ত হয়ে সিন্ডিকেটে পাস হতো। এখন তো এই প্রশাসনের সময় ডিন, চেয়ারম্যানরা আলোচনা করে একরকম, পরে সিদ্ধান্ত দেয় একরকম, রেজুলেশন যেরকম আছে আমরা সে অনুযায়ী ৫টায় যায়। আবার কর্মকর্তারা ৪টার দিকে তালা দিয়ে চলে যায়। পরীক্ষা তো সাধারণত ১.৩০টা থেকে ৪.৩০টা বা ২.০০টা থেকে ৫.০০টা। তাহলে বিকালের অংশটা কর্মচারীদের সেবা পাওয়াটা কষ্টকর হয়ে যায়। 

বিষয়গুলো নিয়ে জানতে উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এফ এম আবদুল মঈনকে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। 

উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির আমার বার্তাকে বলেন, সকাল ৯টা থেকে ৪টা পর্যন্ত অফিস কার্যক্রম এটা সরকারি সিদ্ধান্ত।  এখন এই সিদ্ধান্ত তো আমরা পরিবর্তন করতে পারি না। আমাদের ক্লাসের সময় তো সরকার নির্ধারণ করে দেয় না এটা নির্ধারণ করে বিশ্ববিদ্যালয়। ক্লাস যদি ৫টা পর্যন্ত কেউ নিতে চায় সেটা নেয়া যাবে। সিন্ডিকেটে পাস হওয়া সিদ্ধান্ত সাধারণ সভায় পরিবর্তন করা যায় কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, সরকার যেহেতু পরিবর্তন করেছে তাই সাধারণ সভায় এভাবে নেয়া হয়েছে এটা প্রশাসন পরবর্তী সিন্ডিকেটে রিপোর্ট করবে। এছাড়া বৃহস্পতিবার অনলাইনে ক্লাস নেওয়ার সিদ্ধান্ত আপাতত বলবৎ থাকবে বলে জানান তিনি। 

এবি/প্রিন্স