মাকিদ এহসানের রমরমা ঘুষ বাণিজ্য-পর্ব-২

অধিক ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় পরিণত দক্ষিণ বাড্ডা

প্রকাশ : ১৪ নভেম্বর ২০২২, ১০:৩৩ | অনলাইন সংস্করণ

  এ. আর মোল্লা

  প্রিন্ট ভার্সন

কোন ভবনের নির্মাণ কাজ শুরুর ১৫ দিন আগে লিখিতভাবে জানানোর নিয়ম রয়েছে রাজউককে। এছাড়া এলাকা ভিত্তিক রয়েছে দায়িত্বপ্রাপ্ত রাজউকের পরিদর্শক। তাহলে রাজউক কর্মকর্তাদের যোগসাজোস ছাড়া কোনভাবেই নকশার বাহিরে ভবনের নির্মাণ কাজ একেবারেই অসম্ভব।

আধুনিক ঢাকা গঠনের পরিকল্পনায় বড় বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছেন খোঁদ রাজউকেরই অথরাইজড অফিসার মাকিদ এহসান। মাকিদ এহসানের তত্ত্বাবধানে চলছে দক্ষিণ বাড্ডা এলাকায় অসংখ্য নকশা বহির্ভূত ভবন নির্মাণের কাজ। ইতিমধ্যে অসংখ্য ঝুঁকিপূর্ণ ভবন নির্মাণ কাজের সমাপ্তি ঘটেছে। 

দক্ষিণ বাড্ডা এলাকায় অনুসন্ধানকালে এসব চিত্র ফুঁটে উঠেছে। তবে ভবন মালিকেরা বলছেন মাকিদ ও তার অধিনস্ত কর্মকর্তাদের ভয়াবহ ঘুষ বাণিজ্যের কারণেই দক্ষিণ বাড্ডা এলাকায় এমন পরিস্থিতি তৈরী হয়েছে। ঘুষের মাধ্যমে নকশা, ঘুষের মাধ্যমে ছাড়পত্র, ঘুষের মাধ্যমে ভবনের পদে পদে বিচ্যুতি।

এছাড়া কলাম ও বেইজমেন্ট কাজ শুরুর সময় পরিকল্পিতভাবেই উপস্থিত থাকেন না রাজউক কর্মকর্তারা। মাসিক মাসোয়ারা, এককালীন মাসোয়ারা, এমনকি নির্মাণ কাজ শেষ হওয়া পর্যন্ত এ বাণিজ্য চলমান থাকে।

এসব তথ্য উঠে এসেছে বিভিন্ন ভবন মালিকের বক্তব্যে। কিন্তু তারা কেউ প্রকাশ্যে মুখ খুলতে রাজী নন। কারণ তাদের ভবনেও রয়েছে প্রায় একই রকম সমস্যা। 
 

তবে সার্বিক বিষয়ে নিরপেক্ষ তদন্ত করলে মাকিদ এহসানের মুখোশ উন্মোচিত হবে বলে দাবী করেছেন একাধিক ভবন মালিক। ভূমিতে ড্যাবের সামান্য সমস্যা থাকলে মাকিদের কপাল খুলে যায়। কারণ তখন ছাড়পত্র ও নকশা পেতে মালিককে দিতে হয় ২৫ লাখ থেকে কোটি টাকা পর্যন্ত।

কেউ কেউ নকশার বাইরে অতিরিক্ত ২/১ তলা বেশি ভবন নির্মাণ করছেন। তবে কোন ঝামেলাই নেই, যদি থাকে মাকিদের আর্শীবাদ। তবে মাকিদের আর্শীবাদ না থাকলে বড়ই বিপদ, তখন মাকিদ বেছে নেন একটি অভিনব বাণিজ্য যার নাম উচ্ছেদ বাণিজ্য। 

কোন ভবন মালিক মাকিদের বা তার অনুগত অফিসারের আয়ত্তে না আসলে শুধুমাত্র তাদের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা গ্রহণ করেন মাকিদ। তবে মাকিদের এ ব্যবস্থার উদ্দেশ্যও বাণিজ্য।

কারণ কারো কারো একটি নোটিশ দেয়ার পর সমঝোতা হয়ে আর কোন নোটিশ দেয়া হয় না। কারোবা ২য় নোটিশ, কারো ক্ষেত্রে চূড়ান্ত নোটিশ প্রদানের পরেও ভবন কোনদিনও উচ্ছেদ হয় না।

মাকিদের এহেন কর্মকান্ডে দক্ষিণ বাড্ডা বাজার ও আশপাশ অত্যাধিক ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় পরিণত হয়েছে। মাকিদকে কঠোর বিভাগীয় ব্যবস্থার আওতায় নিয়ে আসতে না পারলে রাজউক তার সুনাম ও ঐতিহ্য হারাবে বলে মত দিয়েছেন বিশ্লেষকেরা। 

দক্ষিণ বাড্ডা বাজার এলাকায় সরেজমিনে অনুসন্ধান করে দেখা গেছে ক-২৪, দক্ষিণ বাড্ডা বাজার মোড় ভবনটির ৭ তলার কাজ চলমান। ভবনটির ডান পাশে ৪/৫ ফুট সরু রাস্তা রয়েছে।

যা ভবনটির পেছন দিয়ে চলে গেছে ও সামনে কোন রাস্তা না থাকায় অন্যের জমির কিছুটা অংশ নিয়ে ভবনের সামনে আট ফুটের সরু রাস্তা করা হয়েছে। 
ভবনটি কততলা হবে তা এখনও ধারণা পাওয়া যায়নি তথ্য সংবলিত সাইনবোর্ড না থাকায়। ডানে ও পেছনে সামান্য জায়গা ছাড়লেও তা ডেভিয়েশন করে পূর্ণ করা হয়েছে। এছাড়া ভবনটির বামপাশে কোন জায়গাই ছাড়া হয়নি। 

এছাড়া ১০০০/১ (ধারণা, যেহেতু তথ্য সংবলিত সাইনবোর্ড নেই) সমিতির বিল্ডিংয়ের পাশের বাড়ী, পশ্চিম মেরুল বাড্ডা। ম-১১৭, পশ্চিম মেরুল বাড্ডা। ম-১০৪, মেরুল বাড্ডা।  ম-৬০, মেরুল বাড্ডা। ম-৬২, মেরুল বাড্ডা।

প্রতিটি ভবনই কোনরূপ নকশার তোয়াক্কা না করে মাকিদ ও তার সেন্ডিকেটের সদস্যদের ম্যানেজ করে রমরমা ঘুষ বাণিজ্যের মাধ্যমে ভবনগুলোর নির্মাণ কাজ বিনা বাধায় এগিয়ে যাচ্ছে। যা তদন্ত করলে মাকিদের মুখোশ উন্মোচিত হবে বলে দাবী এলাকাবাসীর।

মাকিদের বিভিন্ন অভিযোগের ব্যাপারে তার অফিসে গিয়ে কথা বলার চেষ্টা করলে তিনি কথা বলতে রাজি হননি।

তবে রাজউক জোন-৪ এর উপ পরিচালক একেএম মাকসুদুল আরেফিনকে ফোন করলে তিনি বলেন, ভবনগুলোর সব তথ্য মাকিদের কাছে রয়েছে। তাই আপনি মাকিদের সাথে কথা বলেন।

মাকিদ কথা বলতে রাজি হননি তাই আপনার সাথে কথা বলতে চাই এমন প্রশ্নে তিনি মাকিদকে বলে দেবেন বলে জানান। আবারও মাকিদের সাথে কথা বলার চেষ্টা করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি।

এবি/ওজি