ই-পেপার বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

বিশ্বাস সকল অর্থের মূল

তৌহিদ এলাহী :
২৫ অক্টোবর ২০২২, ১৬:১৯
তোৗহিদ এলাহী। ছবি : ফেসবুক।

আমাদের বিনিময় মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হয় টাকা (Money) । সত্যিকার অর্থে ভেবে দেখলে, টাকা রঙচঙে কাগজ অথবা কম্পিউটারে ঢুকানো অর্থহীন কিছু ডিজিট ছাড়া কিছুই মনে হবে না। ঠিক যখন থেকে বিশ্বাস করতে শুরু করেছি এটি কাজের, এর কিছু বিনিময় ক্ষমতা আছে, তখন থেকেই টাকার ক্ষমতা আরোপিত হয়েছে। অর্থই ( Money) এযাবৎকালে মহাবিশ্বের সর্বজন বিশ্বাসযোগ্য সবচেয়ে প্রচলিত গাঁজাখুরী গল্প (Myth/Fiction), যে গাঁজার নেশায় ঢুলে ঢুলে সভ্যতা এতদূর এসেছে।

এরিস্টটল হতে এডাম স্মিথ সবাই ধারণা করেছেন অর্থের আদিরুপ বিনিময় প্রথা; কিন্তু এ ধারণার বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ নেই। প্রাচীন সমাজ সংঘবদ্ধ হয়ে শিকার আর সংগ্রহ করত, সবাই মিলে ভাগাভাগি করে খেত, মুদ্রা বা বিনিময়ের বালাই ছিল না। প্রকৃত আদি মুদ্রা হিসেবে এসেছে তিমির দাত, শুকরের গজদন্ত, শামুকের খোল, স্বর্ন-রোপ্য-ব্রোঞ্জের রিং/টুকরা এমনকি শক্তহয়ে যাওয়া কাদামাটির টুকরা। আদি লেখকরাও কবি-সাহিত্যিক জাতীয় কেউ নন, বরং আদি মুদ্রা হিসেব রাখার জন্য সরকারী আমলা-কেরানিরাই পৃথিবীর আদি আনিসুল হক, ইমদাদুল হক মিলন-- প্রাচীনতম লেখক গোষ্ঠী।

পৃথিবীতে প্রথম কাগজের নোটের ব্যবহার দেখা যায় চীনে। মার্কো পোলো চীন দেখে এসে ইউরোপে কাগজের টাকার গল্প বললে ইউরোপীয়রা এগুলো আষাঢ়ে গল্প মনে করে পাত্তা দেয়নি। আদতে , প্রথম শতকের শুরু থেকেই চীন প্রতিষ্ঠিত উন্নত সাম্রাজ্য, আমাদের বিসিএস পরীক্ষার চেয়ে কম্পিটিভ পরীক্ষা হত তাদের সরকারী চাকুরিতে প্রবেশ করার জন্য। এমন এক চাকুরিওয়ালা ক্যাডার অফিসার কাই লুন (খোঁজা) বাশ ,কাঠ, শ্লেট ইত্যাদির পরিবর্তে নানাকায়দায় গাছের বাকল, পুরোনো কাপড় , মাছ ধরার জাল একসাথে মিশিয়ে কাগজ আবিষ্কার করেন। ১০০০ সালের দিকে সিচুয়ান প্রদেশে ব্যবসায়ীরা লোহা, তামা, সোনার মুদ্রা জমা রেখে এক ধরণের কাগজের রিসিট দেয়া শুরু করে। লোকজন বহনের সুবিধার্তে এসব কাগুজে রিসিট নিয়ে ঘুরত এবং কেনাকাটায় বিনিময় করত, কারো ধাতব মুদ্রার পুনরায় দরকার হলে এগুলো আবার রিসিট রেখে ফিরিয়ে দেয়া হত। তবে দু একজন ফেইক রিসিট ছাড়া শুরু করলে সরকার এই কাগুজে মুদ্রা প্রিন্ট করার দায়িত্ব নিয়ে নেয়, বেসরকারীভাবে প্রিন্টিং শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে ঘোষণা করে। ধাতব মুদ্রা বহন ছিল কঠিন। ধান-চাল বা কাপড়কে সরকারী ট্যাক্স আরোপের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহারের বাধা দূর করে কাগুজে টাকাই হয়ে যায় চীনের প্রধানতম বিনিময় মাধ্যম। এর উপর ভিত্তি করে ত্রয়োদশ শতাব্দীর মাঝামাঝি চীন অর্জন করে ঈর্ষণীয় অর্থনৈতিক সফলতা , গড়ে তুলে সে সময়ের সর্বশ্রেষ্ঠ সভ্যতা। পরবর্তীতে শাসকগণ বিশেষ করে Hongwu চীনকে আদর্শ অতীতে নিয়ে যাওয়ার ভুল পলিসি গ্রহণ করে কাগুজে টাকাকে নিষিদ্ধ করলে ধীরে ধীরে পঞ্চদশ শতাব্দীর মাঝামাঝি চীন অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে।

ইউরোপের স্বর্ণকাররাই প্রথমে অফিসিয়াল ব্যাংকার হিসেবে কাজ শুরু করে । চীনের মত এখানেও ধণীরা তাদের নিকট সোনা-রুপা জমা রাখত রিসিট নিয়ে। সেগুলোকে অন্যরা বিনিময় মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করত। স্বর্ণকাররা এক ধাপ এগিয়ে গিয়ে চেক বা রিসিট লোন আকারে দেয়া শুরু করে। পরে সোনা-রুপা দিয়ে এ রিসিটের মুল্য শোধ করলেই হলো। অর্থাৎ একদম বাতাসের ভেতর থেকে টাকার জন্ম হলো। আর স্টক মার্কেটে জন্মটা হচ্ছে ইউরোপিয়ানদের বিদেশে ব্যবসা বা রাজ্য দখলের জন্য চাদা তুলে কমন ফান্ড তৈরির করে সেগুলো দিয়ে ব্যবসা বা যুদ্ধ জাহাজ পাঠানোর মাধ্যমে। অভিযান লাভজনক হলে শেয়ারহোল্ডাররা লভ্যাংশ পেত। এতে ডাচ/ব্রিটিশ/ফ্রেঞ্চ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিগুলো পৃথিবীতে প্রথমদিককার জায়ান্ট করপোরেশন হিসেবে আবির্ভুত হয়।

কেরোসিন আবিষ্কার রাতের অন্ধকার দূর করে। এতে শিল্প জ্বালানির প্রাথমিক সমাধান হলেও --লাইট বাল্ব আবিষ্কার অন্ধকার দূর করে, পাশাপাশি অর্থণীতিতে নিয়ে আসে অভাবনীয় পরিবর্তন। লাইট বাল্ব তৈরির জন্য আলভা এডিসনের জেনারেল ইলেক্ট্রিক প্রথমদিককার সফল লিমিটেড লায়াবিলিটি কোম্পানি (LLC)-- অর্থাৎ ব্যবসায়ে লস করলে বিনিয়োগকৃত অংশটাই লস হবে , এর বাইরে বিনিয়োগকারীর নিজস্ব ঘটি-বাটি বিক্রি করে দেনা শোধ করতে হবে না।

পৃথিবীর আধুনিক সভ্য মানুষের ভালোবাসার নাম স্বর্ণ। স্বর্ণকে সম্পদ হিসেবে জমা করেছে প্রায় সকল সভ্যতার রাজা-সম্রাটগণ। যখন কাগজের মুদ্রাকে বিদেশী বাণিজ্যের কাজে লাগানোর চিন্তা আসল, তখন থেকেই মুদ্রাকে স্বর্ণের মুল্যমানের সাথে তুলনাকরে নির্দিষ্ট করে দেয়া হলো, যেমন এক আউন্স স্বর্ন = $২০.৬৭ ডলার। এ ধরণের পদক্ষেপ বিশ্ববাণিজ্যকে সহজতর করে তুলছিল , কারণ সকল দেশের মুদ্রাকেই স্বর্ণে পরিবর্তনের সুযোগ আছে। এই গোল্ড স্ট্যান্ডার্ড কাগুজে মুদ্রাকে চালিত করেছে দেড়শ বছরের অধিক। তবে আমেরিকায় সমস্যা হয়ে যায় সকল ব্যাংক তাদের নিজস্ব রিসিট বা মুদ্রা চালু করে দেয়। ১৮৫০ এর দিকে সেখানে ৮৩৭০ এর অধিক বিনিময়যোগ্য মুদ্রা প্রচলিত ছিল। এ সুযোগে তৈরি হয় জাল টাকা।

এ প্রেক্ষিতে তৈরি হয় আমেরিকার ফেডারেল রিজার্ভ বা সেন্ট্রাল ব্যাংক। কেন্দ্রীয় মুদ্রানীতির মাধ্যমে ডলার বা মুদ্রা ছাপানো হয়। তবে গোল্ড স্ট্যান্ডার্ড সবসময় ঝামেলা হিসেবে ত্বরান্বিত করেছে ডিপ্রেশন/ রিসেশন। দেখা যেত কুখ্যাত 'ব্যাংক রান'। টাকা জমাকারীরা কোন কারণে ভয় পেয়ে বা অনাস্থার অবস্থা তৈরি হলে সকলেই ডিপোজিট মানি উত্তোলন করতে গেলে সকলের টাকা একসাথে ব্যাংকে ফেরত পাওয়া সম্ভব নয়। কারন ব্যাংক এত টাকা হাতে রাখে না, লোন দিয়ে রাখে। ফলে ব্যাংক ক্রাশ করে। একটা ব্যাংক ক্রাশ করলে এর প্রভাব পড়ে অন্যগুলোতে। অর্থাৎ টাকা ব্যবস্থাপনায় মানুষের বিশ্বাস কমে গেলে ‘ব্যাংক রান’ শুরু হয় এবং ডিপ্রেশন তরান্বিত হয়। সকল সমালোচনা উপেক্ষা করে ১৯৩৩ ইউ এস প্রেসিডেন্ট এলেনর রুজভেল্ট তার দেশে সকল স্বর্ণের মজুদ , গয়না, গোল্ডবার সব রাষ্ট্রের অনুকূলে নিয়ে নেন, ব্যাংক রান থামানোর রাখার জন্য ব্যাংক বন্ধ করে রাখেন কিছুদিন । এ পথপরিক্রমায় ১৯৭১ সালে গোল্ড স্ট্যান্ডার্ড থেকে পুরোপুরি মুক্ত হয় ডলার। এ সাহসী পদক্ষেপগুলো ডলারকে একক ও স্বাধীন বিশ্বমুদ্রা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে ডলারকে গোল্ডের সাথে তুলনা না করেই স্বাধীন মুদ্রা হিসেবে কাজ করতে দেয়া হয়। এর প্রভাব ছিল সুদূরপ্রসারী, বিশ্ব বের হয়ে আসে গ্রেট ডেপ্রেসন থেকে, সারাবিশ্বের উন্নয়ন এগিয়ে যায় বহুগূণ গতিতে।

ভবিষ্যতে টাকা থাকবে? থাকলেও কাগজের মুদ্রা, ব্যাংক ক্রেডিট কার্ড এগুলোর কি আর অস্তিত্ব থাকবে। নাকি কোন সরকারী বা জাতিরাষ্ঠের নিয়ন্ত্রণহীন বিটকয়েনের মত ব্লকচেইন টেক বা ইলেকট্রনিক মুদ্রাগুলোই সারা দুনিয়ার অর্থণীতির ভবিষ্যত?

তা যাই হোক, সামনের দিনগুলোতে অর্থণীতিবিদ স্টেফানি কেলটনের দেয়া Modern Monetary Theory (MMT) এর বহুল ব্যবহার রাষ্ট্রীয় অর্থণৈতিক পলিসিতে এক ধরণের বৈপ্লবিক পরিবর্তনের ইংগিত দিচ্ছে। যত দরকার , টাকা ছাপাও। ট্যাক্স ডেফিসিট এসব বলে ভয় দেখানো অনর্থক। মুদ্রস্ফীতি বেড়ে গেলে সুদের হার চড়িয়ে দাও। তবে এটা কি শুধু ইউএস ডলারের জন্য প্রযোজ্য নাকি সারা দুনিয়ার অন্যান্য মুদ্রার জন্য প্রজোয্য তা সুস্পষ্ঠ নয়।

লেখক : উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (লেখাটি লেখকের ফেসবুক থেকে নেয়া)

ইরান-ইসরায়েল সংঘাত ও সংকটময় মধ্যপ্রাচ্য

খ্রিষ্টপূর্ব ৭০০০ অব্দে ঐতিহাসিক নগর সভ্যতার সন্ধান পাওয়া একটি দেশ হচ্ছে ইরান। একটি আলাদা জাতি

ইরানের প্রতিশোধ; বড় যুদ্ধের ঝুঁকিতে পৃথিবী

অবশেষে ইরান প্রতিশোধমূলক হামলা করেছে ইসরাইলে। বিবিসি জানিয়েছে, ইরানের পাশাপাশি এসব হামলা ইরাক, ইয়েমেন ও

তিস্তার পানি সমস্যা একটি মানবিক সমস্যা

তিস্তা নদী ভারত ও বাংলাদেশের কাছে অত্যন্ত স্পর্শ- কাতর বিষয়৷ নতুন তিস্তা জলবণ্টন চুক্তি ভারত

মিয়ানমারের সাথে সংঘাত-পরবর্তী সম্পর্ক উন্নয়ন

প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমারের চলমান সংকটের প্রভাব অন্যান্য দেশের মত বাংলাদেশের জন্য নিরাপত্তা ঝুঁকি সৃষ্টি করছে।
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ভারতীয় পররাষ্ট্রস‌চিবের ঢাকা সফর স্থ‌গিত

স্বর্ণের দাম আবারও বাড়ল, ভরি ১ লাখ ১৯ হাজার ৬৩৮ টাকা

বাংলাদেশ পিপলস পার্টির মহাসচিব আব্দুল কাদেরের পদত্যাগ

ছাত্ররাজনীতি বন্ধে আইনি লড়াই চালিয়ে যাবে বুয়েট

পাঠ্যপুস্তকের ওপর নির্ভরশীল হয়ে স্মার্ট জেনারেশন সৃষ্টি সম্ভব নয়

মালয়েশিয়ায় ই-পাসপোর্ট সেবা উদ্বোধন

প্যারিসে শত শত অভিবাসীকে উচ্ছেদ করছে পুলিশ

সব সংস্থার মধ্যে সহযোগিতা নিশ্চিত করা বড় চ্যালেঞ্জ: সেনাপ্রধান

গরমে খান কাঁচা আমের সুস্বাদু ৫ পদ

ব্রিটিশ হাইকমিশনারের সঙ্গে বিএনপি নেতাদের বৈঠক

শপথ নিলেন পিএসসির সদস্য প্রদীপ কুমার পাণ্ডে

অপপ্রচার রোধে ভারতীয় প্রতিষ্ঠানের সহায়তা নেব: তথ্য প্রতিমন্ত্রী

রিজার্ভ আবার ২০ বিলিয়নের নিচে নামলো

উপজেলায় ভোট করতে পারছেন না মন্ত্রী-এমপির স্বজনরা

উপজেলা নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে

শেয়ারবাজারে ঢালাও দরপতন

জামিন না দেওয়াকে প্রাত্যহিক কর্মসূচিতে পরিণত করেছে সরকার

তীব্র তাপদাহে চুয়াডাঙ্গায় হিট এলার্ট জারি

বান্দরবানে ৫২ কেএনএফ সদস্য রিমান্ডে

কিশোরগঞ্জে বাসচাপায় দুই মোটরসাইকেল আরোহী নিহত