দক্ষিণ কোরিয়ার দক্ষিণ চুংচেওং প্রদেশে টানা কয়েকদিনের বর্ষণে প্রবল বন্যা দেখা দিয়েছে। কোথাও ভূমিধসের ঘটনাও ঘটেছে। এতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির পাশাপাশি বেশ কয়েকজন হতাহত হয়েছে। দেশটির কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত অন্তত ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে।
মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। কারণ এখনও প্রায় ১২ জন নিখোঁজ রয়েছে। তাদের উদ্ধার অভিযান চলছে। চুংচেওন অঞ্চলে ভূমিধসের কারণে একটা পুরো গ্রাম মাটি ও ধ্বংসাবশেষের নিচে ঢেকে গেছে। বেশিরভাগ ধ্বংসযজ্ঞ ঘটেছে দেশটির দক্ষিণর সানচেংয়ে। এই অঞ্চলে ছয়জনের মৃত্যু এবং আরও সাতজন নিখোঁজ হয়েছে।
বন্যার পানির তোড়ে হাজার হাজার রাস্তাঘাট ও ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং ডুবে গেছে, কৃষিজমির ক্ষতি হয়েছে এবং ব্যাপকভাবে গবাদি পশুর মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। রাজধানী সিউলের কাছে একটি পার্বত্য এলাকা এবং পশ্চিম ও উত্তরাঞ্চলের অন্যান্য জায়গায়ও প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
স্থানীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, বুধবার থেকে শুরু হওয়া মুষলধারে বৃষ্টিপাতের পর থেকে পুরো অঞ্চলজুড়ে প্রায় ১০ হাজার মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে গেছে এবং ৪১ হাজারেরও বেশি পরিবার সাময়িকভাবে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পয়েছে।
রোববার প্রেসিডেন্ট লি জে-মিয়ং সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোকে বিশেষ দুর্যোগ অঞ্চল হিসেবে ঘোষণা করেছেন এবং তার সরকার বহু-সংস্থার সমন্বয়ে উদ্ধার অভিযান শুরু করেছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ইউন হো-জং স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে সরকারের ‘সকল সম্পদ’ কাজে লাগানোর নির্দেশ দিয়েছেন।
গতকাল দেশটির নিরাপত্তা মন্ত্রণালয় জানায়, চুংচেওং প্রদেশের সিওসান শহরে বাড়িঘর, ধানক্ষেত ও খামার প্লাবিত হয়েছে। স্থানীয় কর্তৃপক্ষ জানায়, তারা বন্যার মধ্যে ১৩টি ভিন্ন শহর থেকে ৫ হাজার ১৯২ জনকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়েছে। বৃষ্টি ও বন্যায় ৪৯৬টি সরকারি এবং ২৭৬টি ব্যক্তিগত সম্পত্তির ক্ষতি হয়েছে।
এদিকে পাকিস্তানে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি, বরং আরও অবনতি হয়েছে। দেশটির পাঞ্জাব প্রদেশে ব্যাপক বন্যা দেখা দিয়েছে। ভয়াবহ এই বন্যা প্রাণ কেড়ে নিয়েছে বহু মানুষের। মাত্র ২৪ ঘণ্টায় প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৬৩ জন। গত ২৬ জুন থেকে এখন পর্যন্ত মোট ১৭০ জনের মৃত্যু হয়েছে।
দক্ষিণ কোরিয়া ও পাকিস্তানের পাশাপাশি প্রবল বৃষ্টিতে ভারত ও রাশিয়াতেও বন্যা দেখা দিয়েছে। ভারতের রাজস্থান রাজ্যের আজমেরে টানা বৃষ্টিতে প্লাবিত হয়েছে সরকারি হাসপাতালসহ শহরের বিভিন্ন এলাকা। জলাবদ্ধতার কারণে হাসপাতাল চত্বরে হাঁটুসমান পানিতে চলাফেরা করতে দেখা গেছে রোগী ও স্বাস্থ্যকর্মীদের।
রাশিয়াতে টানা বৃষ্টিতে প্লাবিত হয়েছে অন্তত আটটি গ্রাম। জরুরি ব্যবস্থাপনায় ১০০ জনের বেশি বাসিন্দা, তাদের পোষা প্রাণী এবং গবাদিপশু উদ্ধার করা হয়েছে। বন্যায় ডুবে গেছে ৯৩টি বাড়ি। বরফে ঢাকা এই অঞ্চল সাম্প্রতিক বছরগুলোতে জলবায়ু পরিবর্তনের সরাসরি শিকার বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
আমার বার্তা/এল/এমই