পরবর্তী শান্তি আলোচনার জন্য রাশিয়ার কাছে প্রস্তাব পাঠিয়েছেন জেলেনস্কি

প্রকাশ : ২০ জুলাই ২০২৫, ১০:৪১ | অনলাইন সংস্করণ

  আমার বার্তা অনলাইন:

ইউক্রেন আগামী সপ্তাহে রাশিয়ার সঙ্গে নতুন করে শান্তি আলোচনায় বসার প্রস্তাব দিয়েছে। গত মাসে আলোচনা থেমে যাওয়ার পর পূর্ব ইউরোপের এই দেশটির পক্ষ থেকে নতুন এই কূটনৈতিক উদ্যোগ নেওয়া হলো।

রোববার (২০ জুলাই) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।

শনিবার ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এক ভিডিও বার্তায় জানান, জাতীয় নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা পরিষদের নতুন প্রধান রুস্তেম উমেরভ তার রুশ সমকক্ষ কর্মকর্তাকে এই প্রস্তাব দিয়েছেন। তিনি বলেন, “যুদ্ধবিরতির লক্ষ্যে যা যা করা দরকার, সবকিছু করতে হবে। রাশিয়াকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে, আর লুকিয়ে থাকার সুযোগ নেই।”

জেলেনস্কি এ সময় সরাসরি রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বৈঠকের আগ্রহও পুনর্ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, “শান্তি নিশ্চিত করতে নেতৃত্ব পর্যায়ের একটি বৈঠক জরুরি, স্থায়ী শান্তির জন্য এটাই প্রয়োজন।”

রাশিয়া এ বিষয়ে এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি।

আল জাজিরা বলছে, সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী রুস্তেম উমেরভকে সম্প্রতি জাতীয় নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা পরিষদের প্রধান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তার ওপরই শান্তি আলোচনায় গতি আনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

এর আগে তিনি তুরস্কে অনুষ্ঠিত দুটি শান্তি আলোচনায় ইউক্রেনীয় প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন। সেসব আলোচনায় মূলত কেবল বন্দি ও মৃত সৈন্যদের বিনিময়ের বিষয়ে কিছু অগ্রগতি হয়েছিল। তবে সেসময় রাশিয়া ইউক্রেনের কাছে যে শর্ত দিয়েছিল — চারটি অঞ্চল রাশিয়াকে ছেড়ে দেওয়া এবং পশ্চিমা সামরিক সহায়তা প্রত্যাখ্যান — সেগুলো কিয়েভের কাছে একেবারেই গ্রহণযোগ্য ছিল না।

এর আগে গত শুক্রবার রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ অবশ্য বলেন, জেলেনস্কির মন্তব্য — শান্তি আলোচনায় গতি আনতে হবে — তাতে মস্কোরও সম্মতি রয়েছে। বিশ্লেষকরা এটিকে রাশিয়ার অবস্থানে একটি কৌশলগত নমনীয়তা বলেই দেখছেন।

বিশেষ করে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রাশিয়ার ওপর যে নতুন চাপ সৃষ্টি করেছেন, তা এই অবস্থান বদলে প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।

গত সপ্তাহে ট্রাম্প মস্কোকে ৫০ দিনের সময়সীমা দিয়েছেন যুদ্ধবিরতির জন্য, না হলে রাশিয়ার পণ্যে ১০০ শতাংশ শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছেন। পাশাপাশি, যারা রুশ তেল কিনবে তাদের ওপরও “সেকেন্ডারি স্যাংশন” দেওয়ার সম্ভাবনার কথা বলেছেন।

তিনি ইউক্রেনকে আরও বেশি অস্ত্র পাঠানোর প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন। তবে রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা এই শর্তকে “ওয়াশিংটনের ব্ল্যাকমেইল” বলে অভিহিত করে বলেন, “এতে বোঝা যায় ইউক্রেন আসলে শান্তি চায় না বরং যুদ্ধ চালিয়ে যেতে চায়।”

আল জাজিরা বলছে, এমন এক সময়েই নতুন আলোচনার প্রস্তাব এসেছে, যখন যুদ্ধের ময়দানে দুইপক্ষের মধ্যে সহিংসতা কমছে না। শনিবার ভোরে রাশিয়া দক্ষিণ ইউক্রেনের ওডেসা বন্দরে বড় ধরনের ড্রোন হামলা চালায়, যাতে অন্তত একজন নিহত ও ছয়জন আহত হয়।

জেলেনস্কি জানান, ওই রাতে রাশিয়া ইউক্রেনজুড়ে ৩০টির বেশি ক্ষেপণাস্ত্র ও ৩০০ ড্রোন নিক্ষেপ করে, যার প্রভাব পড়ে ১০টি অঞ্চলে। অন্যদিকে, ইউক্রেন রাশিয়ার রোস্তভ অঞ্চলে ড্রোন হামলা চালালে সেখানে একজন রেলকর্মী আহত হন এবং চার ঘণ্টার জন্য ট্রেন চলাচল বন্ধ রাখতে হয়।

রাশিয়ার রাজধানী মস্কোর আকাশেও ড্রোন হামলা প্রতিহত করা হয় বলে জানান মেয়র সের্গেই সোবিয়ানিন। এর কারণে কিছু সময়ের জন্য ভনুকোভো ও ডোমোদেদোভো বিমানবন্দরের ফ্লাইট বন্ধ রাখতে হয়। রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় দাবি করেছে, শনিবার দুপুর ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৭টার মধ্যে তারা ২৭টি ইউক্রেনীয় ড্রোন ধ্বংস করেছে।


আমার বার্তা/এল/এমই